জাপান থেকে আসা দুই শিশুর মা জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানো তাদের বাবা ইমরান শরীফকে হয়রানির উদ্দেশ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে তার আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলে ধরেন তার আইনজীবী মুসতাক আহমেদ। এসময় শিশু দুটির বাবা ইমরান শরীফসহ তার আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
আইনজীবী মুসতাক আহমেদ বলেন, শিশু দুটিকে নিয়ে করা মামলা আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় নিছক হয়রানির উদ্দেশ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এরিকো নাকানো বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ইমরান শরীফের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলার অভিযোগে সে বলেছে, ইমরান শরীফ তার ফোনের চ্যাট অ্যাপ হ্যাক করেছেন। ঘটনাটি তিন মাস আগে ঘটেছে বলে এরিকো দাবি করেছে। এই আইনজীবী আরও বলেন, তার কোন অভিযোগ থাকলে সে আপিল বিভাগকে জানাতে পারতো। কিন্তু তা না করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা করেছে।
আরও পড়ুন: জাপানি দুই শিশু থাকবে বাবার হেফাজতে: হাইকোর্ট
আইনজীবী মুসতাক বলেন, আপিল বিভাগ বাচ্চাদের সঙ্গে তার বাবা ইমরান শরীকফে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যে কোন সময় দেখা করার সুযোগ দিতে বলেছেন। কিন্তু শিশুদের সঙ্গে তাদের বাবাকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। আবার আপিল বিভাগ বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছেন। কিন্তু বাচ্চাদেরকে স্কুলে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে আপিল বিভাগের আদেশকে লংঘন করা হচ্ছে। বিষয়গুলো আমরা আগামী ২৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগের কাছে তুলে ধরবো।
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগ জাপান থেকে আসা দুই শিশু ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মা জাপানের নাগরিক এরিকো নাকানোর সঙ্গে থাকবে এবং শিশুদের বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরান শরীফ শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন বলে আদেশ দেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবা ইমরান শরীফ এই সময়ে স্বাধীনভাবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। আদালত ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে এই সময়ের মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে বলেন আপিল বিভাগ।
আরও পড়ুন: জাপানি মায়ের রিট: ২ মেয়েসহ বাবা ও ফুপুকে ৩১ আগস্ট হাজিরের নির্দেশ
জানা যায়, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই এরিকো ও ইমরানের বিয়ে হয়, তাঁদের তিন মেয়ে সন্তান রয়েছে। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। পরে ছোট মেয়েকে তার নানির কাছে রেখে গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন এরিকো। ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই মেয়ে শিশুকে ফিরে পেতে ঢাকায় এসে ১৯ আগস্ট রিট করেন তিনি। পরে ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে আরেকটি রিট করেন ইমরান।
এ রিটের ওপর গত ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন। রায়ে আদালত বলেন, এ রিটটি চলমান থাকবে। দুই মেয়ে পাঁচ নম্বর বিবাদীর (ইমরান শরীফ) হেফাজতে থাকবে। মা দেখা সাক্ষাৎ এবং একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন। যেহেতু মা জাপানি নাগরিক এবং সেখানে বসবাস ও কর্মরত সে কারণে তিনি তার সুবিধা মতো সময়ে বাংলাদেশে এসে শিশু সন্তানদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন সময় কাটাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বছরে তিনবার বাংলাদেশে যাওয়া আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের যাবতীয় খরচ পাঁচ নম্বর বিবাদীকে বহন করতে হবে। এর বাইরে যাওয়া আসার খরচ দরখাস্তকারী (মা) বহন করবেন। ছুটির দিনে মাসে অন্তত দুইবার শিশুদের সঙ্গে ভিডিও কলে মাকে কথা বলিয়ে দেবেন। গত কয়েকমাসে বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতাযাত খরচ বাবদ আগামী সাত দিনের পাঁচ নম্বর বিবাদী দরখাস্তকারীকে ১০ লাখ টাকা দেবেন। রিটটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশ প্রতিপালিত না হলে বা অন্য কোনো আদেশের জন্য আদালতে পক্ষগুলো আসতে পারবে। সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখবেন। তাকে প্রতি তিন মাস পর পর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে। তবে জাপানে থাকা ছোট মেয়ে হেনাকে হাইকোর্টে হাজির করানোর নির্দেশনা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: জাপানি ২ শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখার নির্দেশ
পরে ডা. এরিকো নাকানোর দুই শিশু বাবার জিম্মায় থাকবেন বলে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগে শুনানি চলছে।