বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তায় মোট এক হাজার ৫৬১ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন। আর চলতি বছর সব মিলিয়ে ২১ হাজার বাংলাদেশি ফেরত এসেছে।
এর মধ্যে গতকাল বুধবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ ফ্লাইটে ৮৬ জন ও রাত সোয়া ১টায় সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০২ বিমানযোগে ১২৯ জন বাংলাদেশি ফেরত আসেন। বরাবরের মতো বুধবার ফেরত আসাদেরও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য জরুরি সহায়তা দেয়া হয়।
শুধুমাত্র একটি মাফলার নিয়ে বুধবার ফেরত আসা কিশোরগঞ্জের সোহরাব জানান, দুই বছর আগে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে অনেক স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। কিন্তু ধরপাকড়ে তার সব স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন। তার অভিযোগ, রুম থেকে তাকে ধরে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সাড়ে ছয় লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে যাওয়া গাজীপুরের হারুন জানান, একটি নির্মাণাধীন কোম্পানিতে কাজ করতেন। কর্মস্থল থেকে রুমে ফেরার পথে ধরপাকড়ের শিকার হয়ে তাকে ফিরতে হয়।
টাঙ্গাইল জেলার শাহবুল ইসলাম জানান, বিদেশ যাবার আগে দেশে তিনি নিয়মিত গাড়ি চালাতেন। দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স জাভেদ ওভারাসিজের প্রলোভনে পড়ে চার মাস পূর্বে তিন লাখ ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে ড্রাইভিং ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। কিন্তু চার মাসের কোনো বেতন পাননি। এখন ধরপাকড়ের শিকার হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হলো তাকে।
সিলেটের কামাল আহাম্মেদ, টাঙ্গাইলের মো. জাহেদ আলী, গাজীপুরের ইমরান, কুমিল্লার ইব্রাহিম, নরসিংদীর বাবুলসহ আরও অনেকেই জানালেন, তারা তাদের খরচের টাকাটাও তুলতে পারেননি।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার বাংলাদেশিকে শুধু সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হলো। দেশে ফেরা অনেক কর্মীদের অভিযোগ, আকামা তৈরির জন্য তারা কফিলকে (নিয়োগকর্তা) টাকা দেয় কিন্তু কফিল তাদের আকামা তৈরি করে দেয়নি। এখন পুলিশ যখন তাদের গ্রেপ্তার করছেন কফিল কোনো দায় নিচ্ছে না। বিষয়গুলো দুঃখজনক।
তিনি বলেন, ‘ফেরত আসা সবাই ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায়। এভাবে যেন কাউকে শূন্য হাতে ফিরতে না হয় সেজন্য যাওয়ার অগেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বিশেষ করে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিত।’
এদিকে সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমির শুক্রবার সকালে ঢাকায় ফেরার কথা।
সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ জানিয়েছেন, একই ফ্লাইটে আরও ১০০ জন নারী সৌদি আরব থেকে ফেরত আসার কথা রয়েছে।