পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক বাস্তবতার নিরীখে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স (আইওসি)-২০২৩ আয়োজনের অংশীদার হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত হয়েছে।
‘পিস প্রোসপারিটি অ্যান্ড পার্টনারশিপ ফর এ রেজিল্যান্ট ফিউচার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ঢাকায় হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে দুই দিনব্যাপী (১২ ও ১৩ মে) অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স শেষে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শুক্রবার (১২ মে) সন্ধ্যায় সম্মেলনটির উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন মরিশাসের রাষ্ট্রপতি, মালদ্বীপের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ১৭টি মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি দলসহ মোট ২৫টি দেশের সরকারি প্রতিনিধি দল। এছাড়া তিনটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা- সার্ক, ডি-৮ এবং বিমসটেক এর মহাসচিব এবং আরও কয়েকটি দেশের ঢাকাস্থ কূটনৈতিক মিশন ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ আরও ১৫০ জন বিদেশি অতিথিও সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
মোমেন বলেন, এই আয়োজনের মাধ্যমে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ভারত মহাসাগর উপকূলবর্তী দেশসমূহসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব সুদৃঢ় হয়েছে।
আরও পড়ুন: এ অঞ্চলের দেশগুলোর সমস্যা সমাধান করে একসঙ্গে চলতে চায় বাংলাদেশ: শাহরিয়ার
মন্ত্রী বলেন, সম্মেলনটি ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী দেশসমূহকে নিয়ে আয়োজন করা হলেও এই ফোরামে সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি আলোচিত হয়েছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের আলোচনায় অনেক সুপারিশ ও মতামত উঠে এসেছে। দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিভিন্ন ক্ষেত্র- নিরাপত্তা, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, সামুদ্রিক সম্পদ, সুনীল অর্থনীতি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং পরিবেশগত ভারসাম্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কেন্দ্রে বাংলাদেশ অবস্থিত হওয়ায় এটি এই অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান মন্ত্রী।
উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ পুর্নগঠনের কার্যক্রম শুরু করে সাগর ও সামুদ্রিক অর্থনীতির উপর জোর দেন। তিনি ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট-১৯৭৪ প্রণয়ন করেন, যা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সামুদ্রিক আইন।
আরও পড়ুন: ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স: 'মুক্ত, নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চলের' সুপারিশ মাসুদ মোমেনের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ উদ্বৃত করে মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ এবং উত্তোরত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ছয়টি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন-সামুদ্রিক কূটনীতি; জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা; অংশীদারিত্ব জোরদার করা; সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা জোরদার করা; শান্তির সংস্কৃতির প্রসার; এবং ন্যায়সঙ্গত এবং সমতাভিত্তিক ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক, জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রণীত ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের জন্য ভারত মহাসাগরের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সকলের সমৃদ্ধি নিশ্চিতে তিনি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারত মহাসাগরের উপর জোর দেন।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, মরিশাসের রাষ্ট্রপতি, মালদ্বীপের উপ-রাষ্ট্রপতি ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তৃতীয় প্লেনারি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও ১২ মে চারটি প্রাক-সম্মেলন অধিবেশন ও সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে আরও চারটি প্লেনারি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আমন্ত্রিত মন্ত্রী ও মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
সফররত মন্ত্রীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর বর্ধিষ্ণু অর্থনৈতিক অঞ্চল হলো এশিয়া: শাহরিয়ার আলম