‘উইমেন ইন টেক’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে হুয়াওয়ে। এই প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়, যার প্রতিপাদ্য ছিল ‘টেক ফর হার, টেক বাই হার, টেক উইথ হার’।
এই উদ্যোগে হুয়াওয়ের কৌশলগত সহযোগী হিসেবে কাজ করছে ইউনেস্কো। প্রতিযোগিতাটির লক্ষ্য স্থানীয় আইসিটি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ও প্রতিভা বিকাশ।
এই প্রতিযোগিতায় ৭৫০ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্য থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৮ জনকে বাছাই করা হয়। এই পর্যায়ে একক ও দলীয়– দুই ক্যাটাগরির প্রতিযোগিতা ছিল। আইসিটিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে নতুন সমাধান সম্ভব ও এর ব্যবসায়িক সফলতার সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে দলভিত্তিক আইডিয়াগুলোকে নির্বাচিত করা হয়।
আরও পড়ুন: নারী দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট মিট অ্যান্ড ফেয়ার আয়োজিত
বিজয়ী দলগুলোকে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সমস্যার যুক্তিসঙ্গত মূল্যায়ন, ব্যবসা পরিকল্পনার অভিনবত্ব, বিজনেস কেস ও অ্যাসাইনমেন্ট স্কোর। প্রতিযোগিতা চলাকালে একাধিক ইন্টারভিউ, পরীক্ষা ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে আলাদাভাবে বিজয়ীদের বেছে নেওয়া হয়েছে।
শীর্ষ আইডিয়া হিসেবে নির্বাচিত হয় ‘ধারা’। কীভাবে সৌর শক্তি ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবার জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে কাজ করেছে 'ধারা'।
প্রথম রানার আপ হিসেবে বিজয়ী হয়েছে ‘টেরা বিন’। যাদের বিজনেস আইডিয়া ছিল সোলার কম্পোস্টার ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা যায়।
দ্বিতীয় রানার আপ হিসেবে নির্বাচিত হয় ‘সোলনেট’। এই দল ক্লাউড প্রযুক্তি ও অ্যাপের ব্যবহার করে কীভাবে সহজে ও কম খরচে সোলার প্ল্যান্ট তৈরি ও ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে কাজ করেছে।
চ্যাম্পিয়ন, প্রথম ও দ্বিতীয় রানার আপ দল যথাক্রমে তিন লাখ টাকা, দুই লাখ টাকা ও এক লাখ টাকা মূল্যের প্রাইজমানি পেয়েছে।
এই অর্থ তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে পারবে।
এছাড়া চারজন প্রতিযোগী তাদের বিশেষ পারফরমেন্সের কারণে ব্যক্তিগতভাবে বিজয়ী হয়েছেন।
বিজয়ীরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের ছাত্রী কায়সারী ফেরদৌস, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির গ্রাজুয়েট মাহমুদা নাঈম, এসবিআইটি লিমিটেডের ডিজাইন ভেরিফিকেশন ইঞ্জিনিয়ার সুমাইয়া তারিক লাবিবা ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ইইই বিভাগের ছাত্রী সাফরিনা কবির।
এই বিজয়ীরা চীনে সফর করে দেশটির স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
রাজধানীর একটি হোটেলে ৪ জুন রাতে অনুষ্ঠিত গালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আহমেদ পলক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জারা জাবীন মাহবুব, ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুন: এটিজেএফবি এভিয়েট্যুর উইমেন্স আইকন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ১০ নারী
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ইউনেস্কোর অফিস প্রধান ও প্রতিনিধি ড. সুজান ভাইজ, আইইউটিয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও হুয়াওয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং।
এসময় পলক বলেন, আমি 'উইমেন ইন টেকের' মূল প্রতিপাদ্য ‘টেক ফর হার, টেক বাই হার, টেক উইথ হার’ দেখে সত্যিই আনন্দিত। এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী নারীরা যে কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা দেখিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি হুয়াওয়েকে এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখার জন্য সাধুবাদ জানাই।
বাংলাদেশে নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ডিজিটাল ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীদের উন্নয়ন এবং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে দৃঢ় করার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আমি হুয়াওয়েকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আজকের প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টরে নারীদের অবদান কতোটা সম্ভাবনাময় হতে পারে।
পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জারা জাবীন মাহবুব বলেন, হুয়াওয়ের ‘ওমেন ইন টেকের’ মতো প্রোগ্রামগুলো আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি বর্তমান প্রজন্মের প্রতিভাবান নারী শিক্ষার্থীদের তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করতে এবং ভবিষ্যতে যোগ্য পেশাজীবী হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে উৎসাহিত করে।
তিনি আরও বলেন, আমি বিশেষভাবে আনন্দিত এটি দেখে যে, এই প্রতিযোগিতায় ৭৫০ জনেরও বেশি নারী শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এই প্রথম আসরের সাফল্য নিঃসন্দেহে আগামী বছরগুলোতে আরও বেশি নারী শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করবে।
বিটিআরসিয়ের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারের দুইটি প্রধান এজেন্ডা হলো ডিজিটাল অগ্রগতি এবং নারীর ক্ষমতায়ন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বিগত বছরগুলোতে উভয় ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছি।
বাংলাদেশে ইউনেস্কোর অফিস প্রধান ও প্রতিনিধি ড. সুজান ভাইজ বলেন, এই বছরের উইমেন ইন টেকে অংশগ্রহণকারী তরুণীরা দেখিয়েছে যে, বাংলাদেশের প্রযুক্তিশিল্পে তাদের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে, যা স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণেও কাজ করবে।
আইইউটির ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, নারী ক্ষমতায়নের একটি প্রতিফলনই হচ্ছে এই প্রোগ্রাম। এই প্রতিযোগিতা এমন একটি ভবিষ্যৎ তৈরিতে সাহায্য করবে, যেখানে নারীরা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বিকাশে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি এই ক্ষেত্রে নারীদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।
হুয়াওয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং বলেন, একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা বাংলাদেশে নারীদের প্রতিভা ও দক্ষতা বিকাশ, ইন্টার্নশিপ ও চাকরির উপর গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রতিভা ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীরা যাতে পেশাক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যায়, সে বিষয়টিকে আমরা বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী হুয়াওয়ে ‘উইমেন ইন টেক’ প্রোগ্রামটি চালু করে। এই প্রতিযোগিতার পাশাপাশি হুয়াওয়ে তরুণদের সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে এবং দেশকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ভবিষ্যতের দিকে চালিত করতে ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ ও ‘হুয়াওয়ে আইসিটি কম্পিটিশনের’ মতো নানান উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে।
আরও পড়ুন: নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ইউএন উইমেনের ডকুসিরিজ প্রদর্শন