ঢাকা থেকে বরগুনাগামী ঝালকাঠিতে এমভি অভিযান -১০ লঞ্চে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে বলে জানিয়েছেন আগুনে পুড়ে যাওয়া নৌযানের মালিক হাম জালাল শেখ।
শুক্রবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইউএনবি বলেন, লঞ্চের এক সুপারভাইজার আনোয়ার ভোর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ফোন করে প্রথম অগ্নিকাণ্ডের খবর দেয়।
কর্মচারী আনোয়ারের খবরের বরাতে মালিক হাম জালাল বলেন, প্রথমে দোতলায় একটা বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়, সঙ্গে সঙ্গে কেবিনে আর লঞ্চের পেছনের বিভিন্ন অংশে আগুন লাগে। তারপর তৃতীয় তলার কেবিন ও নিচতলায় ছড়িয়ে পড়ে আগুন। তবে কিভাবে আগুন লাগে এটা জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: লঞ্চের আগুনে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে দেড় লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা
যান্ত্রিক ত্রুটি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে হাম জালাল বলেন, ওই লঞ্চে অন্তত ২১টি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল, কিন্তু এত দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে যে সময় পাওয়া পায়নি।
লঞ্চে কোনো যান্ত্রিক ক্রুটি ছিল না দাবি করে তিনি বলেন, ইঞ্জিনে আগুন লাগলে কখনো পুরো জাহাজে আগুন ছড়িয়ে পড়ে না। বিকট শব্দে দোতলা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ইঞ্জিন ও কেবিনের দিকে।
হাম জালাল এমভি অভিযান-১০, ৩ ও ৫ লঞ্চের মালিক।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার কোনো লঞ্চের ইন্সুরেন্স নেই। আমার কেন কারও কোনো লঞ্চে ইন্সুরেন্স নেই।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি কমিটি গঠন করেছে। তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: ৭ সদস্যের কমিটি গঠন
শুক্রবার গভীর রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার উপকূলে সুগন্ধা নদীর মাঝখানে ৮০০ যাত্রী নিয়ে ‘অভিযান-১০’ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৩৯ জন নিহত ও ৭২ জন আহত হয়েছেন।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ফজলুল হক ইউএনবিকে বলেন, আমাদেরকে রাত ৩টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানানো হয়। তবে ঘন কুয়াশার কারণে প্রথম দিকে ফায়ার সার্ভিসের জাহাজগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে কিছুটা সময় নেয়।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মইনুল হক ইউএনবিকে বলেন, ‘লঞ্চ থেকে ৩৭টি লাশ এবং ৭২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
৩৭টি লাশের মধ্যে চারটি শনাক্ত করা হয়েছে এবং বাকি ৩৩টি লাশ ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এএসপি।
আহত ৭২ জনের মধ্যে গুরুতর দগ্ধ ৬৬ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে লঞ্চে আগুন: নিহত ৩৯, আহত অর্ধশতাধিক
শেবাচিমের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া ৬৬ জনের মধ্যে ১৮ জন নারী। আমাদের কাছে কোনো ডেডিকেটেড বার্ন ইউনিট না থাকায় তিনজন নারী ও চারজন পুরুষকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
তবে ইউএনবি বরিশাল প্রতিনিধি জানান, আহতদের মধ্যে দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছেন।
এরই মধ্যে দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটিকে তীরে আনা হয়েছে।