২০২০ এ মুক্তির কথা থাকলেও করোনার প্রথম ধাক্কায় পিছিয়ে যায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্দেশক সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামানের ‘রোহিঙ্গা’ সিনেমার শুভ মহরত। গত ২ নভেম্বর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়ে যায় ছবিটি এবং এর মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। সমসাময়িক রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে বানানো হয়েছে সিনেমাটির গল্প। এবারের বিনোদনধর্মী ফিচারে থাকছে বিশ্বমানের এই চলচ্চিত্রটি নিয়েই কিছু কথা।
এক নজরে রোহিঙ্গা সংকট
২০১৭ সালের আগস্টের শেষের দিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী একটি ক্র্যাকডাউন শুরু করে, যা উত্তর রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার সদস্যকে বাড়িঘর ছাড়া করে। এই দেশত্যাগ ছিল মিয়ানমারে কয়েক দশকের বিধিনিষেধমূলক নীতি এবং নিপীড়নের চূড়ান্ত পরিণতি। বর্তমানে কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ভাসানচর এলাকায় প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলালিংকের বিরুদ্ধে জেমসের মামলা
করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালীন মানবিক পরিষেবাগুলো কমিয়ে দেয়ায় শিবিরগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। ২০২১ সালে রোহিঙ্গারা মুখোমুখি হয় দাবানল এবং বন্যার। শিবিরগুলোতে করোনাভাইরাস শনাক্ত ক্রমাগত বাড়তে থাকে। অন্যদিকে বাড়তে থাকে উদ্বাস্তু ও সাহায্য গোষ্ঠীর ওপর সরকারি বিধিনিষেধ।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। অভ্যুত্থান দেশব্যাপী আইন অমান্য আন্দোলনের সূত্রপাত করে, মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে সংঘাত পুনঃপ্রজ্বলিত করে এবং বিদ্যমান মানবিক সংকটকে আরও খারাপ করে।
আরও পড়ুন: জীবন সঙ্গীনী হিসেবে ডিলেন মেয়ার’কে বেছে নিলেন ‘টোয়াইলাইট’ তারকা ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট
সমসাময়িক চাঞ্চল্যকর গল্পের ছবি ‘রোহিঙ্গা’ মুক্তির পথে
'রোহিঙ্গা' বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক সামরিক অভিযান চালানোর পর নিজেদের দেশ থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের দুর্দশার একটি আভাস দেবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে আবর্তিত হবে বাংলা ফিচার ফিল্মটি। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বিশ্বজুড়ে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনাতে পরিণত হওয়ার এই সময়ে খুব শিগগিরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে সিনেমাটি। বাংলা ভাষায় নির্মিত এই ছবিটি ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ, হিন্দি ইত্যাদিসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় প্রকাশিত হবে।
‘রোহিঙ্গা’ চলচ্চিত্র নির্মাতার কথা
বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ড মূলত সর্বহারা এবং সমাজের ছিন্নমূল মানুষের জীবনকে তাঁর ছবির মূল উপজীব্য রাখেন। এ কারণে তিনি ‘নিম্নবর্গের মানুষের জীবনের রূপকার’ বা ‘প্রান্তিক মানুষের জীবনের প্রতিকৃতি’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: তিথির অসুখ: ইমরাউল রাফাত পরিচালিত চরকির নতুন ওয়েব ফিল্ম
এখন পর্যন্ত তিনি মোট চারটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ফিচার ফিল্ম তৈরি করেছেন। নাচোলের ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিপ্লবের ওপর ভিত্তি করে ‘নাচোলের রানী’ ডায়মন্ডের প্রথম ফিচার ফিল্ম। এই বিশেষ ছবির জন্য তিনি কলকাতার রাশিয়ান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গোর্কি সদন থেকে সম্মানসূচক পুরস্কার এবং টালিগঞ্জ অতন্দ্র সাংস্কৃতিক সংসদ ইন্ডিয়া থেকে ‘অতন্দ্র পদক’ পেয়েছেন।
২০০৯ সালে তাঁর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র 'গঙ্গাযাত্রা'-এর জন্য ‘সেরা পরিচালক’ এবং ‘সেরা চিত্রনাট্যকার’ বিভাগে দুটি বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। 'গঙ্গাযাত্রা' মুভিটিই ডায়মন্ডের দুটি সহ মোট আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে।
আরও পড়ুন: আমেরিকার প্রেসকট চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত অমিতাভ রেজার 'রিকশা গার্ল'
এছাড়াও তিনি ব্যাংককে ‘বাচসাস অ্যাওয়ার্ড’, ‘স্টার সিনে অ্যাওয়ার্ড’, ‘ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড বাংলা ২০১০’ অর্জন করেছেন।
ডায়মন্ডের পঞ্চম মুভি হিসেবে ‘রোহিঙ্গা’ কোন রকম কর্তন ছাড়াই সেন্সর বোর্ড থেকে প্রেক্ষাগৃহে দেখানোর জন্য ছাড়পত্র পেয়ে গেছে। খুব শিগগিরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে মুভিটি। ‘গঙ্গাযাত্রা’ ও ‘অন্তর্ধান’ এর মতো এবারো ডায়মন্ডের সাথে প্রযোজনায় থাকছেন শবনম শাহনাজ চৌধুরী।
আরও পড়ুন: পুরাতন বান্টি-বাবলি জুটিকে টপকাতে আসছে বান্টি অর বাবলি-২
‘রোহিঙ্গা’ ফিল্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা
ছবিটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন মডেল তারকা ও অভিনেত্রী আরশি হোসেন। টিভি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে তার যাত্রা শুরু হয়। এর আগে দুটি মুভিতে কাজ করলেও এটাই তার প্রথম মুভি যেখানে তিনি মূল ভূমিকায় আছেন। এছাড়া ২০২০-এ শূটিং শুরু হওয়া ডায়মন্ডের ‘কোভিড-১৯ ইন বাংলাদেশ’ মুভিতেও মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। আরশির সাথে থাকছেন মঞ্চ থেকে শুরু করে বড় পর্দার পরিচিত মুখ ওমর আয়াজ অনি।
এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে আছেন সাদ্দাম হোসেন, মাস্টার তানজিদ, জান্নাত আক্তার শুচি, সামিয়া আক্তার বৃষ্টি, এস এম মহসিন, শ্রেয়া, হায়াতুজ্জামান খান, এনামুল হক, সাকিবা বিনতে আলী, বদল সিদ্দিক ও লিটন।
আরও পড়ুন: কবির খান-এর ‘৮৩’ তে কপিল দেব-এর বেশে রনবীর সিং
পরিশিষ্ট
২০০৭ থেকে শুরু করে মোট ১৪ বছর ধরে নির্মিত হয়েছে সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামানের ‘রোহিঙ্গা’ চলচ্চিত্রটি। স্বয়ং পরিচালকের ভাষায়- ‘সরকারের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলাম। যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, আমি পরিস্থিতিটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিত্রিত করার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে শুটিং করতে চেয়েছিলাম।’ সর্বসাকুল্যে একজন দক্ষ সিনেমা নির্মাণ শিল্পীর পরিণত চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে নিঃসন্দেহে একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে অধিষ্ঠিত হবে।