প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছর পর পয়ঃনিষ্কাশন (স্যুয়ারেজ) প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এতদিন শুধু নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের তৎপরতা। স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা ছিল অবহেলিত। অবশেষে দীর্ঘদিন পর স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রথম ধাপে ১১টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ নগরবাসীকে পয়ঃবর্জ্য স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে কোনো স্যুয়ারেজ লাইন নেই। খালনালার মাধ্যমে পয়ঃবর্জ্য কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে পড়ছে। সেখান থেকে চলে যাচ্ছে সাগরে। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়বে না। ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে বর্জ্য শোধন করা হবে।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) ২০১৮ সালের শেষের দিকে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলো স্যানিটেশন ফ্যাসিলিটিস নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরবাসীর জন্য পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রুল
এদিকে তিন হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকার বিশাল এ পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার প্রকল্পের একক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পেতে যাচ্ছে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান।
তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড নামে দক্ষিণ কোরীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদন দেয়া অনেকটা চুড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তাইইয়ং তো মাঝে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প এবং মদুনাঘাটের শেখ রাসেল পানি শোধনাগার প্রকল্পের প্রধান ঠিকাদার হিসেবে কাজ পেয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনা ও কোরিয়ান কোম্পানিগুলো মোট ৩৬টি দরপত্র কিনেছে। এর মধ্যে চীনা কোম্পানিগুলো কিনেছে ৩৩টি দরপত্র এবং বাকিগুলো কোরিয়ান কোম্পানি।
২০১৮ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য একনেক তিন হাজার ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকার তিন হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা এবং বাকি ৫০ কোটি টাকা ওয়াসা দেবে। প্রকল্পের লক্ষ্য হলো বন্দরনগরীতে পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার সমাধান করা।
আরও পড়ুন: ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডিকে পুনঃনিয়োগ না দেওয়ার আহ্বান ক্যাবের
যদিও উল্লেখিত প্রকল্পে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে তারপরও তাইইয়ং আগের দুটি প্রকল্পে যুক্ত থাকায় এই প্রকল্পেও একমাত্র দরদাতা হিসেবে তাদেরই কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোভিডের কারণে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে। ফলে একই কোম্পানি বাংলাদেশের অবকাঠামো এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি মেগাপ্রকল্প পরিচালনা করতে সক্ষম কিনা তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিকল্পনাবিদরা।
সূত্রের দাবি, ভান্ডাল জুড়িতে কাজের মান এবং অগ্রগতি প্রত্যাশিত না হওয়ায় আরও বড় প্রকল্প পরিচালনায় কোম্পানিটির সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এই তিনটি চুক্তির মূল্য এক সাথে চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। যদিও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে একক দরপত্র আহ্বান করা প্রতিষ্ঠানকে কাজের অনুমোদন না দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।