কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানান, দেশীয় পশুর বাজার ধরে রাখতে মিয়ানমার থেকে সকল প্রকার গবাদি পশু আমদানি মঙ্গলবার থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে স্থানীয় খামারিরা ন্যায্যমূল্যে পশু বিক্রি করতে পারবে। উৎসাহিত হবে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা। জমে উঠবে স্থানীয় পশুর বাজার। মিয়ানমার থেকে পশু আসলে স্থানীয় খামারি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই দেশীয় পশুর বাজার ধরে রাখতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে।
বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার ৩ থেকে ৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে টেকনাফ করিডোর দিয়ে কোন পশু আসেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণ কোরবানির পশু আমদানি করা হয়। মিয়ানমারের পশু এবং স্থানীয় খামারিদের পশু নিয়ে কোরবানি করতো কক্সবাজারের স্থানীয়রা। তখন রোহিঙ্গাদের চাপ ছিল না। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ঢল কক্সবাজার জেলায় আসা শুরু হলেও সেই বছর তেমন চাপ পড়েনি। তবে ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের বিশাল জনগোষ্ঠী উখিয়া টেকনাফে কোরবানি দেয়। সেই বছর মিয়ানমার থেকে প্রায় ১৮ হাজারের বেশি গরু আমদানি করা হয়। এতে টেকনাফ উখিয়াসহ পুরো জেলায় কোন পশুর সংকট দেখা দেয়নি।
এদিকে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধের কারণে এবারে উখিয়া টেকনাফসহ পুরো জেলায় কোরবানির পশু সংকট হবে এবং পশুর দাম বেড়ে যাবে এমন আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
উখিয়ার বিক্রেতা সেলিম উদ্দিন জানান, মিয়ানমার থেকে পশু না আসায় খামারিরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই বাজারে এবার পশুর দাম একটু বাড়তি।
স্থানীয় ক্রেতা খলিল উল্লাহ উখিয়া বাজার থেকে গরু কিনেছেন একটি। তিনি জানান, গতবছরের তুলনায় এবার ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দাম বেড়েছে। সামনে আরো দাম বাড়তে পারে এমন শংকায় একটু দাম বাড়তি হলেও এখন থেকে পশু কিনে নিচ্ছে অনেকে।
জানা গেছে, টেকনাফ ও উখিয়ার প্রায় ৫ লাখ স্থানীয়দের জন্য কোরবানির পশুর প্রয়োজন প্রায় ১৩ থেকে ১৫ হাজার। আর ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজন ১৭ থেকে ২২ হাজার পশু। স্থানীয় এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ৩০ হাজার থেকে ৩৭ হাজার পশু লাগবে। কিন্তু উখিয়া টেকনাফে স্থানীয় খামারিদের কাছে পশু রয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার পশু। আরো প্রয়োজন হতে পারে ২০ থেকে ২৫ হাজার পশু। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ৭১৭ টি। ফলে উখিয়া টেকনাফের সংকট মেটাতে পশুর প্রয়োজন আরো কমপক্ষে ১৩ হাজার। এই অবস্থায় মিয়ানমার থেকে আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় কোরবানির পশুর সংকট দেখা দেবে। এই সুযোগকে পুঁজি করে স্থানীয় অসাধু খামারি ও ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দেবে পশুর দাম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, গত বছরের ন্যায় এবারো রোহিঙ্গারা যাতে ভালোভাবে কোরবানি করতে পারে সেজন্য সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। ক্যাম্পে থাকা প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার পরিবারের মাঝে কোরবানির পশুর মাংস বিতরণ করা হবে। প্রত্যেক পরিবারকে কমপক্ষে ২ কেজি মাংস দেয়া হবে। বিভিন্ন এনজিও এসব পশু সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের মাঝে ঈদের দিন বিতরণের কার্যক্রম শুরু করেছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের অনেকে নিজেরা পশু কিনে কোরবানি দেবেন।