এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘রাজস্ব বোর্ড ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে আগামীতে ন্যায়সঙ্গত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তাদের নিজ নিজ কর জরিপকে আরও তীব্র ও জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছে।’
তিনি আরও জানান, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোকে অগ্রিম আয়কর নেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ এটি আয়করের একটি ভালো উৎস।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রায় ৮ দশমিত ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: করের আওতা বাড়াতে এনবিআরের সর্বাত্মক চেষ্টা
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রাথমিকভাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭৭৮.১ বিলিয়ন টাকা। পরবর্তীতে তা সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ৩৪৮০.৭ বিলিয়ন টাকা।
বাজেটের নির্ধারিত হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরের মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৩৭৮০ বিলিয়ন টাকা। যেখানে এনবিআর থেকে ৩৩০০ বিলিয়ন টাকা আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আর এনবিআরবিহীন উৎস থেকে প্রাপ্ত আয় ধরা হয়েছে ১৫০ বিলিয়ন টাকা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব ৩৩০ বিলিয়ন টাকা।
এনবিআরের জন্য বিশাল পরিমাণ অর্থের মধ্যে ১০৩৯.৪৫ বিলিয়ন টাকা আয়, মুনাফা ও মূলধন কর থেকে আসবে, সবচেয়ে বেশি ১২৫১.৬২ বিলিয়ন টাকা আসবে মূসক ভ্যাথেকে, সম্পূরক শুল্ক থেকে আসবে ৫৭৮.১৫ বিলিয়ন টাকা, আমদানি শুল্ক থেকে আসবে ৩৭৮.০৭ বিলিয়ন টাকা এবং বাকি টাকা আসবে অন্যান্য খাত থেকে।
এনবিআর কর্মকর্তা জানান, দ্বিতীয়ার্ধের জন্য করের কিস্তি পরিশোধের সময় ডিসেম্বরের পরে। ‘সুতরাং ওই মাস থেকে আয়কর উইংয়ের সংগ্রহটি ভালো অবস্থানে থাকবে।’
কর জরিপ জোরদার করার অংশ হিসেবে রাজধানীর গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডি এবং অন্যান্য ধনী অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গার সম্পত্তির মালিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
আরও পড়ুন: শুল্ক আদায় প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করবে এনবিআর
দেশের অর্থনীতি, জিডিপি নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করছে: ফখরুল
এনবিআর কর্মকর্তা জানান, যোগ্য তবে তালিকাভুক্ত নয় এমন ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) দেয়া হবে। এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যেসব ই-টিআইএন হোল্ডাররা আয়কর রিটার্ন জমা দেন না বা সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এনবিআর কর্মকর্তারা সম্ভাব্য করদাতাদের সন্ধানে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে বাসাবাড়ি, দোকান এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন। তারা সম্ভাব্য যোগ্য করদাতাদের আয় ও সম্পদ সম্পর্কিত তথ্য যাচাইয়ের জন্য পরিষেবা সংস্থাগুলোর সহায়তা নেবেন।
জরিপ দলগুলো বাড়ি বা ব্যবসায়িক সম্পত্তি এবং পরিষেবা বা অন্যান্য পেশা থেকে আয় করা ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যবসার সনদ এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক নথি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বোর্ড কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছে যে সব যোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনতে হবে এবং কর পরিশোধের বিষয়ে ভয় অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
চলতি অর্থবছরে প্রত্যেক টিআইএনধারীর জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করায় কর জরিপ আরও বৃদ্ধি করতে এবং নিষ্ক্রিয় টিআইএন নম্বরগুলো সক্রিয় করতে বলা হয়েছে।
ইতোমধ্যে এনবিআরের আয়কর শাখা এ বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে।
অভ্যন্তরীণ জরিপের অংশ হিসেবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশন, রাজউক এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সম্ভাব্য করদাতাদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এগুলো ‘সেকেন্ডারি ডাটা’ সংগ্রহের উৎস। সেকেন্ডারি ডাটাগুলো এমন কোনো ব্যক্তির তথ্যকে বোঝায় যা ইতোমধ্যে কোনো সংস্থায় রাখা আছে।
এনবিআর উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য করদাতাদের তথ্য সেকেন্ডারি ডাটা সংগ্রহের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ: আইএমএফ
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২১ অর্থবছরে ৬.৮ শতাংশ হবে: এডিবি
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের ২০১৯-এর অক্টোবরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫-২০১৯ সময়কালে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত (জিডিপির শতকরা হিসেবে করের অবদান) ছিল ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। একই সময়ে ভারতে তা ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ, নেপালে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল।
তথ্য অনুসারে, এ অনুপাত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং উন্নত দেশগুলোর জন্য ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
একটি দেশের অর্থনৈতিক সম্পদকে সরকার কতটা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তা কর-জিডিপি অনুপাতের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়।
সরকারি নথি অনুসারে, চলতি অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ১১ দশমিক ৯ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, যা ২০১৯-২০ সালের রেকর্ড ১২ দশমিক ৪ শতাংশের চেয়েও কম হবে। কোভিড রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রগুলোকে মারাত্মকভাবে আঘাত করা সত্ত্বেও সরকার ২০২২-২৩ সালে এটি বাড়িয়ে ১২ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করার লক্ষ্য নিয়েছে।