সংশ্লিষ্টরা জানান, মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত মাছের রেণু উৎপাদনের ভরা মৌসুম। দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ রেণু যশোরে উৎপাদিত হয়। চাঁচড়া মৎস্যপল্লির ৩৪ হ্যাচারিতে গত বছর প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার কেজি রেণু উৎপন্ন হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে শ্রমিক সংকট, পোনার দাম কমে যাওয়া এবং বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় হ্যাচারিগুলো বন্ধ করতে তারা বাধ্য হয়েছেন।
যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ও ফাতিমা হ্যাচারির মালিক ফিরোজ খান জানান, চলতি বছরে ভরা মৌসুমে হ্যাচারিগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে পরে চালু করা হবে।
‘গত বছর দুই লাখ ৬০ হাজার কেজি রেণু পোনা উৎপাদন করা হয়েছিল। এ বছরও একই লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু সেটি অর্জিত হবে না। এতে সপ্তাহে ১০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সরকার এ খাতে দৃষ্টি না দিলে উদ্যোক্তারা পথে বসবেন,’ যোগ করেন তিনি।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, রেণু পোনা উৎপাদনে যশোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জেলায় ৩৪টি হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন হয়। এর মধ্যে কার্প জাতীয় রেণু পোনা উৎপাদন হয় ৬৪ দশমিক ৮৬ মেট্রিক টন। জেলায় রেণু পোনার চাহিদা ১৫ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন। উদ্ধৃত ৪৯ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। তেলাপিয়া পোনা ১০১ দশমিক ৪০ মিলিয়ন উৎপাদন হচ্ছে। জেলায় চাহিদা রয়েছে ৯৮ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন। তেলাপিয়ার উদ্ধৃত পোনা থাকছে ৬ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন। পাঙ্গাশ রেণু উৎপাদন হয় ৩ দশমিক ৬২ মেট্রিক টন এবং শিং, মাগুর, পাবদা, গুলসা রেণু উৎপাদন হয় শূন্য দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন।
সূত্র আরও জানায়, জেলায় মোট ৫১টি বাওড় রয়েছে। যার আয়তন ১৮ হাজার ৮৪ হেক্টর। এতে উৎপাদিত মাছ দেশের অর্ধেক চাহিদা মিটিয়ে থাকে। আর যশোরের হ্যাচারিগুলো রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, বিগহেড, থাই সরপুটি, মিরর কার্প, জাপানি, চিতল, আইড়, তেলাপিয়া, মনোসেক্স তেলাপিয়া, শিং, কৈ, থাই কৈ, পাঙ্গাস প্রভৃতি মাছের পোনা উৎপাদন করে।
হ্যাচারির পাশাপাশি যশোরে ৫-৬ হাজার নার্সারি রয়েছে। জেলার ২ লাখ লোক মাছ উৎপাদন, চাষ ও এ সংশ্লিষ্ট পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন।
জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, ‘সব সময় আমাদের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রেণু পোনা উৎপাদন করতে হয়। প্রচণ্ড গরমে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এখন আবার করোনার প্রভাবে আমাদের সব হ্যাচারি বন্ধ করতে হলো।’
মাছ চাষি অহিদুল্লাহ লুলু বলেন, করোনার প্রভাবে রেনু পোনা উৎপাদনে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না হ্যাচারি মালিকরা। কেননা চাষিরা রেনু বা পোনা কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বড় ধরনের প্রভাব আমাদের মৎস্য সেক্টরে পড়েছে। দীর্ঘদিন রেণু পোনা উৎপাদন বন্ধ থাকলে দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়বে। যে কারণে আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত আকারে রেণু পোনা উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি মালিকদের অনুরোধ করেছি।’