ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনা, নিম্নমানের কাজ এবং অপরিকল্পিত পরিচালনার ফলে করোনা আতঙ্কের সাথে নোংরা ময়লা পানিতে বসবাস করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। সেই সাথে তারা রয়েছেন ডেঙ্গুর ভয়সহ নানা রোগের ঝুঁকিতে।
টানা বর্ষণে নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীর প্রায় সব এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি। অনেকের বসতঘরে পানি উঠেছে। ঘরের আসবাবপত্র তলিয়ে গেছে পানির নিচে। বিশেষ করে ডিএনডি এলাকায় ঘরে ঘরে বৃষ্টির পানি ঢুকেছে। ফলে মানুষ নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
সিটি করপোরেশন নগরবাসীর কাছ থেকে কর নিলেও নাগরিক সুবিধা দিতে ব্যর্থ। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, তাদের যে সুবিধা দেয়ার নিয়ম রয়েছে নাসিক তা দিচ্ছে না। নগরবাসী নাসিকের কাছ থেকে বরাবরই অবহেলিত।
তারা অভিযোগ করে বলেন, নাসিক কর্তৃপক্ষ সময় মতো ড্রেন পরিষ্কার না করার ফলে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত টানা বর্ষণের কারণে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া অলিগলিতে হাঁটু সমান পানি।
দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম দেওয়ান জানান, কোনো বছরই তার বাসায় বর্ষাকালে পানি প্রবেশ করেনি। এবার এক দিনের বৃষ্টিতে ঘরে পানি ঢুকেছে। আসবাবপত্র সব ডুবে গেছে। ‘আমাদের কষ্টের কি আর শেষ আছে? বর্ষাকাল মাত্র শুরু। সামনে আমাদের কী দুর্গতি আছে আল্লাহ ভালো জানেন।’
ডিএনডির ফতুল্লা দেলপাড়া টাওয়ার পাড় এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান বিদ্যুৎ জানান, বাসায় পানি ঢুকেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন তারা। ‘এক দিনের বৃষ্টিতে পানিবদ্ধ হয়ে পড়েছি আমরা। বর্ষাকালের বাকি সময়টা নিয়ে শঙ্কিত। এতো কোটি টাকা খরচ করে সরকার ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে কী কাজ করছে তার নমুনা এটা?’
কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী সাইদুল ইসলাম সুমন জানান, তাদের এখানে আশপাশে বিশাল এলাকার জুড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে, নিচু এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএনডি এলাকার মাহমুদপুর, ভুইগড়, দেলপাড়া, নয়ামাটি, নুরবাগ, নন্দলালপুর, পিলকুনি, কুতুবআইল, গাবতলি, লালপুর, সস্তাপুর, ইসদাইর, কলেজ রোড, মাসদাইরবাজার, নাগবাড়ি, দেওভোগ, পাইকপাড়া, বাবুরাইল, নারায়ণগঞ্জ শহর, হাজীগঞ্জ, পাঠানতলি, গোদনাইল, জালকুড়িসহ প্রায় সব এলাকায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে মানুষ।
দুর্ভোগের শিকার ফতুল্লার সস্তাপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি কোতালের বাগ, ইসদাইর, লালপুর পৌষপুকুর পাড়, দাপা ঈদ্রাকপুরের পাইলট স্কুল এলাকায়। দিনমজুর ও অটোচালকরা আরও বেশি ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। নিম্ন আয়ের কারণে তাদের সাধারণত নিম্নাঞ্চলের বস্তির ঘরগুলোতে ভাড়া থাকতে হয়। ডুবে গেছে তাদের আবাসস্থল, ভেসে যাচ্ছে ঘরের মালামাল।
এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন একটি মাস্টার প্লান করছি। সেই প্লানের আওতায় ড্রেনগুলো নিয়ে আসলে এ সমস্যা আর থাকবে না। কোভিড-১৯ না থাকলে এত দিনে হয়তো কাজ শুরু করা যেত। তবে আমরা অচিরেই কাজ শুরু করব।’
ডিএনডি পাম্প হাউজের দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান জানান, ডিএনডি এলাকার পুরনো পাম্প হাউজের চারটি মেশিনের নিষ্কাশন ক্ষমতা ৪৪৮ কিউসেক। কিন্তু ডিএনডি এলাকায় পানি নিষ্কাশন প্রয়োজন ৩২০০ কিউসেক। পাম্প হাউজের চারটি মেশিনের মধ্যে দুটি নষ্ট। বাকি দুটি ২০০ কিউসেকের বেশি পানি বের করতে পারে না। ফলে ডিএনডি এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রতি সেকেন্ডে ৩ হাজার কিউসেক পানি কম নিষ্কাশিত হয়। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নতুন পাম্প চলে আসায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পুরনো পাম্প মেরামতের জন্য এবার কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ফলে ডিএনডির নষ্ট হওয়া দুটি পাম্প মেরামত করা যায়নি। এর বাইরে ডিএনডির খাল দখল, খালে আবর্জনা ফেলার মতো কারণগুলো তো রয়েছেই।
‘সেনাবাহিনীও পানি নিষ্কাশনের পাম্প চালানোর টেস্ট কার্যক্রম চালিয়েছিল, কিন্তু করোনা সংকট শুরু হয়ে যাওয়ায় লোকবল সংকটে তা চূড়ান্তভাবে শুরু করতে পারছে না। এছাড়া যেসব খাল সংস্কার করা হয়েছিল, নারায়ণগঞ্জবাসী আবারও সেগুলো ময়লায় পরিপূর্ণ করে ফেলছে। এর মধ্যে পুরানো অচল টিভি, ফ্রিজ, বাসাবাড়ির সোফাসেটসহ গৃহস্থালী জিনিসপত্রও রয়েছে,’ যোগ করেন আনিসুর রহমান।