খুলনা জেলার ভৈরব ও রূপসা এলাকার নদীগুলোতে কাঁকড়া ধরে বিক্রি করেই চলে অনেক কাঁকড়া শিকারির জীবন-জীবিকা।
ভৈরব নদীর গিলাতলা বারাকপুর খেয়াঘাটে কথা হলো সজল (২৫) নামে এক কাঁকড়া শিকারির সাথে। পানির ওপর এই জীবন সংগ্রামে ঠিক কখন জড়িয়েছেন সজলের তা মনে নেই। মামার হাত ধরে এসেছিলেন কাঁকড়া ধরার পেশায়। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে সে এখন সংসারি। আজও এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছে সে।
সজল জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার হাজী গ্রামে। কাঁকড়া ধরে বিক্রি করে চলে সংসার।
তিনি বলেন, কুঁচিয়া দিয়ে বড়শি পেতে কাঁকড়া মারেন। তবে কাঁকড়ার দাম নির্ধারণ হয় আকার-আকৃতি ভেদে।
আরও পড়ুন: ‘ফ্রি ফায়ার গেম’ খেলতে এমবি কেনার টাকা না দেয়ায় কিশোরের আত্মহত্যা!
কথা হয় আর এক শিকারী দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের নন্দনপ্রতাপ গ্রামের মৃত কালাম মন্ডলের ছেলে সালাম মন্ডলের সাথে।
তিনি জানান, অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের হাল ধরতে হয়। এক পর্যায়ে নদীতে নৌকা নিয়ে কাঁকড়া শিকারে নামে। কাঁকড়া শিকার করে যা আয় হয় তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মোটামুটি খেয়ে পড়ে ভালোই আছে।
সজল ও সালামের মতো অনেক জেলেদের জীবন সংসার চলছে কাঁকড়া ধরে। এক ধরনের লম্বা রশির মাথায় ইট ও বড়শি বেঁধে নদীতে ফেলে ধরা হয় কাঁকড়া। এছাড়াও এক প্রকার বিশেষ জালও ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন থেকে ১৫ বস্তা চিনিসহ ৭ মৌয়াল আটক
জেলেরা জানান, ২৫০ থেকে ৫০০ হাজার টাকা বিক্রি হয় কাঁকড়ার কেজি। পুরুষ-নারীসহ কাঁকড়ারও রয়েছে তিনটি ধরণ। এই তিন ধরণের কাঁকড়ার বিক্রির ক্ষেত্রেও দাম আলাদা নির্ধারণ করা হয়। তবে ছোট সাইজের এক কেজি পুরষ কাঁকড়া ১ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে নারী কাঁকড়ার দাম একটু চড়া। ডিম ওয়ালা নারী কাঁকড়া ৫০০, ডিম ছাড়া ৩৫০, ২০০ গ্রাম ওজনের নারী কাঁকড়া ৮-১ হাজার ৫০০ টাকা এবং হিজড়া কাঁকড়া ২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, গিলাতলা বারাকপুর খেয়াঘাট এলাকায় নদীতে ট্রলার ও ছোট নৌকা দিয়ে কাঁকড়া ধরা চলছে। জেলেরা কুচিয়া কেটে বড়শিতে লাগানোর প্রক্রিয়া করছিলেন।
নন্দনপ্রতাপ গ্রামের জেলে কাওসার বলেন, কাঁকড়া ধরার জন্য কুঁচিয়া মাছ কেটে টুকরো করে আহার হিসেবে বড়শিতে লাগানো হয়। বৃষ্টি শুরু হলে নদিতে বৃষ্টির পানি বেড়ে গেলে মিঠা পানিতে কাকড়া পাওয়া যায় না। দাড় বেয়ে চলা মাঝারি ধরণের নৌকায় শত খানেক বাঁশের শলা দিয়ে বাশের খাঁচা বা ঘুনি দিয়ে ধরা হয় কাঁকড়া। এক ঘুনির সাথে আরেক ঘুনি দড়ি দিয়ে বেধে তা মালার মতোন সাজিয়ে রাখা হয় নৌকায়। খাচার মধ্যে কুচিয়া মাছের টুকরো দিয়ে পেতে রাখা হয়। লম্বা রশির মাথায় ভারি (ওজন) বেধে দিয়ে খাঁচাগুলোকে লম্বা দড়িতে মালার মতো বেধে নদিতে ফেলে দেয়া হয়। জোয়ার বা ভাটায় মাঝা-মাঝি পানি যখন স্থির হয় তখন তা টেনে তোলা হয় নৌকায়। খাঁচার ভিতরে কুচে মাছের টুকরো খেতে আসা কাকাড়া খাঁচায় ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এক এক খাঁচায় একের অধিক হারে কাকড়া আটকা পড়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ইয়াসের তাণ্ডব: সাতক্ষীরায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত
একাধিক কাঁকড়া শিকারিরা বলেন, বড় সাইজের কাকড়া মহাজনদের কাছে বিক্রয় করেন তারা। মহাজনরা তা বিদেশে পাঠায়। কিন্তু বর্তমানে করোনার কারণে রপ্তানি বন্ধ থাকায় দাম অনেক কম। আগে তারা অনেক ভালো দাম পেতো, কিন্তু এখন বাজার দাম কমে গেছে। তবুও জীবিকার প্রয়োজনে কাঁকড়া শিকার করে তা বিক্রি করে চলছে।
কিছুটা আক্ষেপের সাথে সজল বলেন, 'কাঁকড়া শিকার করতে গিয়ে আমাদের যে পুঁজি খাটাতে হয় ও পরিশ্রম হয়, সেই হারে দাম পাচ্ছি না।’
দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহাবুব উল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিভাবে জেলেদের জন্য কোনো বরাদ্দ আসলে কাঁকড়া শিকার করে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তাদের প্রকৃত তালিকা করে সহায়তা প্রদান করা হবে।’