জনবল সংকট সমস্যার সমাধান যেন নেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের।
২০১০ সালে ৩০ মার্চ মাত্র ৩০টি শয্যা নিয়ে শুরু হয় এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। বর্তমানে ২৫০শয্যায় উন্নীত হলেও রয়েছে জনবল সংকট।
এতো বড় হাসপাতালে মাত্র ১ জন ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। তাছাড়া চিকিৎসক ও মেডিকেল অফিসার সংকটতো রয়েছেই। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দ্বারা কাজ চালানো হচ্ছে।
এছাড়া গেল কয়েক মাস আগে পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন কয়েকজন সিনিয়র কনসালটেন্ট। আর সেই সঙ্গে আরও কয়েকজন চিকিৎসক বদলি হওয়ার আদেশের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ১০ টাকার টিকিট কেটে সেবা নিচ্ছেন। যেখানে রয়েছে কার্ডিওলজি বিভাগ সিসিইউ, পোস্ট সিসিইউ, গাইনি, নিউরোলজি, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি, অর্থপেডিক্স মেডিসিন, ডায়াবেটিস, নিউরো মেডিসিন, মেডিসিন, ফিজিওথ্যারাপি, নিউরো সার্জারি, হোমো ডায়ালাইসিস, দন্ত বিভাগ, বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইউনিটসহ ইনটেনসিভ কেয়ার আইসিইউ সাপোর্টের ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: খুলনায় ২৭০ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে লাইসেন্স আছে ৯৮টির
এক সময় যা গরীব অসহায় মানুষের জন্য এ সব ব্যয়বহুল চিকিৎসা ছিল শুধুই স্বপ্ন। পাশাপাশি মুমূর্ষু রোগীদের জন্য কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মনিটর, আলট্রাসনো, সিটিস্কান, এমআরআই, ইকো, ইটিটি, ইসিজি, ইটিটি, ডক শর্ট দেওয়ার ব্যবস্থাসহ কার্ডিয়াক মনিটর, লাইফ সাপোর্ট ভেন্টিলেটার ও স্বল্প খরচে প্যাথলজি পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে।
হাসপাতালটিতে গরীব অসহায় রোগী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয় না। এ ছাড়া স্বল্প খরচে এমআরআই, এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইকোসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা রয়েছে। তবে এত সব থাকলেও নেই চাহিদামতো জনবল। বিশেষ করে ৪র্থ শ্রেণীর চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।
এখানে প্রতিনিয়ত বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের চিৎকার, চেঁচামেচি শোনা যায়। তবে, এর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একজন মাত্র টেবিল বয়কে রোগীর টিকিট জমা নিতে দেখা গেছে।
ভুক্তভোগী রোগী শেখ রহিমা বলেন, ‘আমি কার্ডিওলজি বিভাগে ১১২নং কক্ষে টিকিট জমা দিতে পারিনি। কারণ হলো অতিরিক্ত রোগীর চাপ, আর দায়িত্বে আছে মাত্র একজন টেবিল বয়। আমি এতো ভিড়ের মধ্যে টিকিট জমা দিতে পারিনি। এখন বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। এর থেকে ভালো হবে টাকা কিছু খরচ করে ডাক্তারের ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়ে নিরিবিলি সেবা নেওয়া।’
আরও পড়ুন: পরিবেশগত ছাড়পত্রের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ, খুলনায় তবুও চলছে ইটভাটা
নাম না প্রকাশ করার শর্তে চুক্তিভিত্তিক এক কর্মচারী বলেন, ‘প্রতিদিন হাজার, হাজার রোগী বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসেন। আমাদের উপর মারাত্মক চাপ পড়ে। তারপরও চাকরি করতে হয়। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কী করব!’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে তিন শিফট ডিউটি করতে হয়। আমাদের ১৩৩ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে চালক, মালীসহ অন্যান্য কর্মচারী আছেন। যারা রোগীর সেবার কাজে নিয়োজিত নেই। অন্যান্য হাসপাতালে সরকারিভাবে ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী থাকলেও আমাদের নেই। প্রতি বছর শোনা যায় জনবল বৃদ্ধি হবে, কষ্ট কম হবে। তবে এখনও আগের মত অবস্থানে আছে।’
এ ব্যাপারে হাপাতালের পরিচালক ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, জনবল সংকট আছে। এছাড়া আরও কিছু শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যে কারণে আরও জনবল সংকট হয়ে গেছে। বিশেষ করে ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল অফিসার ও আনসার সদস্য, চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী।
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে জনবল ঘাটতি থাকলেও সেবা বন্ধ করা যাবে না। হয়তো একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক জনবল সংকট আছে, বৃদ্ধিকরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স কাউন্টার!