প্রথমবারই জমিতে ভালো ফসল হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর তিন গুণ বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যে কারণে তরমুজকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন হাজারও কৃষক।
তরমুজ বটিয়াঘাটার দ্বিতীয় বৃহত্তম ফসল হিসেবে পরিচিত। লবণের করালগ্রাসে দক্ষিণাঞ্চলে পতিত থাকত হাজার হাজার হেক্টর জমি। দুবেলা খেয়ে জীবন চলত বেশির ভাগ কৃষকের।
আরও পড়ুন: সূর্যমুখীর হাসিতে স্বপ্ন দেখছেন খুলনার কৃষকরা
ছাতকে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি, শঙ্কিত কৃষক
বটিয়াঘাটা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রবিউল ইসলামের দিক নির্দেশনায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আবু বক্কর সিদ্দিকী ও শরিফুল ইসলামসহ ২১ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বারবার পরামর্শ, আলোচনা সভা ও বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত ছুটে চলার কারণে আজ প্রায় ২২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজ চাষ হচ্ছে।
এই লাভজনক চাষে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের হাজার হাজার চাষিরা ঝুঁকছেন। উপজেলার সব থেকে বেশি তরমুজ চাষ হচ্ছে গঙ্গারামপুর ইউনিয়নে। এছাড়া সুরখালী, বটিয়াঘাটা, ভান্ডারকোট ইউনিয়নে তরমুজের ফলন হচ্ছে।
তরমুজের জীবনকাল ৯০-১২০ দিন। তবে ফল ধরা শুরু হয় ৬০ দিন পর থেকে। এই উপজেলায় ব্যাপকহারে ড্রাগন, পাকিজা, বীগ ফ্যামিলি, হানি কুইন, বাদশা ও ব্লাক মাস্টার জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি চাষ হচ্ছে ড্রাগন ও পাকিজা। গত বছর এ উপজেলায় তরমুজ চাষ হয়েছিল ৭৮০ হেক্টর জমিতে। এ বছর চাষ হচ্ছে তার তিনগুণ অর্থাৎ ২২০০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে খরচ পড়ে ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং বিক্রি হতে পারে প্রায় ৪ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী উপজেলাব্যাপী প্রায় ৪৪ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছেন কৃষকরা।
বটিয়াঘাটা কৃষি অফিসারের নির্দেশ মতে, কাকডাকা ভোর থেকে কৃষকদের পাশে পরামর্শ ও উৎসাহিত করে চলেছেন একঝাঁক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। তারা হলেন (জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত) সরদার আব্দুল মান্নান, দীপংকর মন্ডল, আ. হাই খান, জীবনানন্দ রায়, কৃষ্ণপদ বিশ্বাস, দীপন কুমার হালদার, মিহির কুমার বৈরাগী, আ. গফফার গাজী, বিষাদ সিন্দু মন্ডল, পিন্টু মল্লিক, মোস্তাফিজুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, প্রতাপ বালা, এস এম জাফিরুল হাচান, ইলোরা আক্তার, রাজীব বিশ্বাস, নিবেদিতা বাছাড়, আনিসুর রহমান, রমেন্দ্রনাথ গাইন, কমলেশ বালা ও শিউলি বিশ্বাস প্রমুখ।
আরও পড়ুন: চাকরি হারিয়ে জীবিকা নির্বাহে ক্যাপসিকাম চাষে স্বাবলম্বি নাজিম উদ্দিন
কচুরিপানা দিয়ে তৈরি সৌখিন সামগ্রী যাচ্ছে বিদেশে
বারোআড়িয়া গ্রামের কৃষক মিরাজ শেখ, সাংকেমারি গ্রামের কৃষক প্রিয়ব্রত রায়, রায়পুর গ্রামের কৃষক মান্নান শেখ, সুখদাড়া গ্রামের কৃষক নিউটন বিশ্বাস জানান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরদার আব্দুল মান্নানের পরামর্শে গত বছর তরমুজ চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন তারা। যে কারণে এবছর অনেক বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এ বছরও অনেক লাভ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তারা।
সার্বিক বিষয়ে বটিয়াঘাটা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সরকার যেভাবে সুযোগ সুবিধা দিয়ে চলেছে কৃষি দপ্তরকে যে কারণে অনেক অসম্ভব কাজ কষ্ট করে আমরা সম্ভবে পরিণত করতে পারছি। আমার ২১ জন উপসহকারীর মাধ্যমে বিভিন্নভাবে কৃষকদের উৎসাহিত করেছি এবং মাঠে বসে বসে কৃষকদের সরেজমিনে তরমুজ চাষে অধিক লাভের কথা বুঝানোর পর কৃষকরা তা বুঝতে পেরেছে। যে কারণে গত বছরের তুলনায় এবার তিনগুণ বেশি চাষ হয়েছে। যদি কোনোরকম দুর্যোগ না হয় তাহলে হাজার হাজার কৃষক অধিক লাভবান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’