চলতি মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে রোপা আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে ধানের দামও সন্তোষজনক হওয়ায় অনেকটা স্বস্তিতে আছেন চাষিরা।
তবে উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে কীটনাশক, সেচ খরচ ও সারের দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে কৃষি বিভাগের আশা এবার জেলায় প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটাই-মাড়াইয়ের কাজ। আবাদ মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি নিয়ে শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া ও রোগ বালাই তুলনামূলক কম থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে রোপা আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ২২ মন থেকে ২৫ মন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে মন প্রতি সাড়ে ১২০০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা দরে। ফলন ও দর দুটোই আশানুরূপ থাকায় কৃষকদের মনে অনেকটা স্বস্তি বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় রোপা আমন ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা
তারা বলছেন, এবছর বীজ, সারের কোনো সংকট ছিল না। কিন্তু কীটনাশক, সেচ খরচ ও সারের দাম বেশি ছিল। তাছাড়া কৃষি শ্রমিকের দামও বেশি। সরকার কীটনাশক, সেচ খরচ ও সারের দাম কমানোর উদ্যোগ নিলে তারা আরও বেশি আমন ধান আবাদে আগ্রহী হবেন।
সদর উপজেলার আতাহার এলাকার চাষি জাহাঙ্গীর বলেন, ‘১০ বিঘা জমিতে আমি আমন করেছি। ধানের চেহারা খুব ভালো। কয়েক দিন পর কাটা শুরু করব। আবাদের শুরুতে বৃষ্টি ছিল না। সেচ দিয়ে আবাদ শুরু করেছিলাম। পরে ভালোই বৃষ্টি হয়েছে। পোকামাকড়ের তেমন উপদ্রব ছিল না। আবহাওয়া ভালো আছে। আশা করছি বিঘায় ২৪ মন করে ফলন পাব। বর্তমানে ধানের বাজার দর সাড়ে ১২শ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা চলছে। এই দাম যদি না কমে তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। ধানের আউড়(খড়) বিক্রি করেও ভালো টাকা পাওয়া যাবে, এতে আমাদের পোষাইয়ে যাবে।’
নাচোল উপজেলার নেজামপুর এলাকার আমন চাষি সেরাজুল জানান, এবার ধানের ফলন ২২ মন থেকে ২৫ মন পর্যন্ত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দামটাও মোটামুটি ভালো। কিন্তু কীটনাশক, সেচ খরচ, সার ও কৃষি শ্রমিকের দাম বেশি। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। সরকার যদি কীটনাশক, সেচ খরচ ও সারের দাম কমায় তাহলে আমরা কৃষকরা লাভবান হতে পারব। তাই আমাদের টিকিয়ে রাখতে সরকারের এদিকে নজর দেওয়া দরকার। একি ধরনের কথা জানালেন অন্যান্য কৃষকরাও।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ৪শ ১৫ হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘আমাদের এবার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে শতকরা ১০১ ভাগ বেশি অর্জিত হয়েছে। এবার গত বছরের থেকে ফলন বেশি হয়েছে। গত বছর ফলন ছিল প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন চাল। আর এবার ৩ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন। এ ফলন বৃদ্ধির কারণ হলো, আমরা প্রণোদনার মাধ্যমে আধুনিক জাতের যে বীজগুলো কৃষকদের মাঝে দিয়েছিলাম সেটার একটা দিক রয়েছে এবং আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্প এবং পরামর্শের মাধ্যমে উফসি জাতগুলো চাষ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছি। কৃষকরা সময়মতো বীজ ও সার পেয়েছে এবং সেটি মাঠে প্রয়োগ করেছে। কৃষক এখন কাটাই-মাড়াইয়ে ব্যস্ত। এখন পর্যন্ত শতকরা ১৬ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। আমরা আশা করছি এ বছর আমাদের উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হবে। আশা করছি আমরা এবার প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করতে সক্ষম হব। যেটি গত বছর ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন।’
আরও পড়ুন: ‘ভবদহের জলাবদ্ধতায় অভয়নগরে পূরণ হয়নি আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা’