পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক লাখ ৬৫ হাজারের বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, জেলায় চাহিদার অতিরিক্ত ৫২ হাজার ২২২টি পশু রয়েছে। খামার ও পারিবারিকভাবে এসব পশুকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লালন পালন করা হয়েছে। এবার করোনা মহামারি না থাকার কারণে পশু হাট জমে উঠার আশা করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে খামারিরা ভালো দাম পাবেন বলে আশা প্রাণিসম্পদ বিভাগের।
তবে পশুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খামারিরা। তারা বলছেন, বাজারে গো-খাদ্যের দাম চড়া। বাধ্য হয়ে তাই বেশি দামে খাবার কিনে গবাদি পশুকে খাওয়ানো হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় হাটে কোরবানির পশুর বেচা কেনা ভালো হবে বলে আশা খামারিদের।
আরও পড়ুন: এবার ১.২১ কোটির বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত: মন্ত্রী
জেলা প্রণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, এবার জেলায় কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৩ টি পশু। আর কোরবানির জন্য মোট পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৫টি। অর্থাৎ ৫২ হাজার ২২২টি পশু অতিরিক্ত রয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় খামারি রয়েছেন ১১ হাজার ৫৪৯ জন। খামারে ও পারিবারিকভাবে এসব পশু লালন পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ৮৮ হাজার ৩০০টি, ছাগল ৬৮ হাজার ৭২টি, ভেড়া ৯ হাজার ৬৭টি ও মহিষ রয়েছে ১৭৬টি। যা চাহিদার তুলনায় বেশি।
সদর উপজেলার নামোনিমগাছি এলাকার খামারি ইকবাল হোসেন জানান, তার খামারে এবার কেরবানির জন্য ২৩টি গরু ও ৭টি মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছে। এক লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে তিন লাখ পর্যন্ত দামের গরু রয়েছে।
তিনি জানান, গরু লালনপালনে বা মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর স্টেরয়েড জাতীয় ট্যাবলেট বা ইনজেকসান ব্যবহার না করেন সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পুষ্টিকর খাবার দিয়েছেন। তবে এই বছর পশু খাদ্যের দাম দ্বিগুন। আগে ভুট্টা ছিল ১৮ টাকা কেজি সেটা এখন ৩৫ টাকা, গম ছিল ২২ টাকা কেজি সে গম এখন ৪০ টাকা। গমের ভুষি ৪৮ টাকা কেজি।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে অপসারণে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আহ্বান
উপররাজারামপুর এলাকার আরেক খামারি এসএম কামাল জানান, তার খামারে বর্তমানে কোরবানির জন্য ২০টি গরু আছে। এবার করোনার সমস্যা না থাকলেও পশু খাদ্যের দাম অনেক বেশি হওয়ায় লালনপালন খরচ অনেক বেশি। তাই গরুর দাম এবার কম হবে না। তাছাড়া চাহিদার ওপর দাম পাওয়া যাবে, চাহিদা ভালো থাকলে দাম ভালো পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর কোনো ঘাটতি হবে না। ভারত বা মিয়ানমার থেকে গরু আনার দরকার নেই। সরকার এদিকে নজর দিলে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বটতলা হাটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম জানান, সপ্তাহের মঙ্গলবার ও শুক্রবার এ দুই দিন হাটবার। করোনার কারণে বিগত বছরে গরুর বেচাকেনা ভালো না হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এবার করোনার সমস্যা নেই আশা করা যায় জুলাই মাসের প্রথম দিক থেকে কোরবানির পশু বেচাকেনা জমে উঠবে।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশু নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছেড়েছে ‘ক্যাটল স্পেশাল’ ট্রেন
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় এবার চাহিদার অতিরিক্ত কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বাড়তি পশু অন্যান্য জেলার চাহিদা পূরন করতে পারবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ভারত থেকে গরু আসা একেবারেই বন্ধ। এছাড়া এই বছর করোনা পরিস্থিতিও ভালো থাকায় পশু হাটগুলোতে বেচা কেনা জমে উঠবে এবং খামারিরা লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।