স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মতো এবারও বাম্পার ফলন হবে।
তবে স্থানীয়দের দাবি, আমে কীটনাশক ও ফরমালিনের ব্যবহাররোধে এখন থেকেই প্রশাসনের নজরদারি দরকার। তা না হলে বিষ-ফরমালিনমুক্ত আম পেতে মুশকিল হবে।
এদিকে জেলার চারটি উপজেলায় আম গাছগুলো মুকুলের ভারে ভেঙে পড়ছে। বাড়ির আঙিনা থেকে বিস্তীর্ণ বাগান পর্যন্ত সব জায়গায় আমের মুকুলের শোভা ছড়াচ্ছে। আর কিছুদিন পরই গুটি আমের দেখা মিলবে।
কৃষকরা বলছেন, এবার বাগানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমের মুকুল এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সর্বোচ্চ ফলন সম্ভব।
সদর উপজেলার বেলগাছী গ্রামের আম চাষি সুফিয়ান মন্ডল জানান, মাঘের শেষভাগ থেকেই তারা আম বাগান পরিচর্যা করতে ব্যস্ত রয়েছেন। এবার তার বাগানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমের মুকুল এসেছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী গ্রামের আম চাষি নবীছদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘এ বছর বাগানগুলোতে প্রচুর পরিমাণ মুকুল হয়েছে। তবে পোকামাকড়ের আক্রমণও একটু বেশি। আমরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক স্প্রে করছি।’
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার মাটি ও আবহাওয়া আম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ জেলাতে প্রতি বছর হিমসাগর, ফজলি, হাড়িভাঙা, ল্যাংড়াসহ সব ধরনের আমই উৎপাদন হয়ে থাকে। মূলত রাজশাহী-চাঁপাই জেলার পর দেশজুড়ে এ জেলার আমের সুখ্যাতি আছে। প্রতি বছর এ জেলার আম জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় জেলাগুলোর চাহিদা পুরণ করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও রপ্তানি হয়ে থাকে চুয়াডাঙ্গার আম।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক আকবরের মতে, দ্রুত আম বাজারজাত করতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর ক্ষতিকর কীটনাশকসহ রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর প্রবণতা থাকে সব সময়। তার পরামর্শ এখন থেকে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি দরকার।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাশরুর জানান, রাজশাহী অঞ্চলের পরেই এ অঞ্চলের আম সুস্বাদু ও প্রসিদ্ধ। বিশেষ করে এখানকার হিমসাগর আমের বেশ সুনাম রয়েছে। সেটি ধরে রাখতে এবারও বিষমুক্ত নিরাপদ আম উৎপাদনে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হাসান বলেন, গত বছর জেলাতে ১৮৭৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ১৯৭৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে আরও বেশি জমিতে আম চাষ হচ্ছে। মূলত আম চাষ লাভজনক হওয়াতে জেলার কৃষকরা আম চাষে ঝুঁকছেন।
এ বছর বিষ ও ফরমালিন মুক্ত আম উৎপাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার।
তিনি জানান, খুব শিগগিরই এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি মাঠ পর্যায়ে তদারকি করবে।