জিসিএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাট্রিক ভারকুইজেন বলেন, ‘অভিযোজন প্রক্রিয়া গতিশীল এবং ত্বরান্বিত করতে কোন বিষয়টি কাজ করছে এবং কোনটি কাজ করছে না তা আমাদের জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পুরো অঞ্চলে বিশেষত বাংলাদেশে প্রচুর অভিযোজনের কাজ হচ্ছে।
প্যাট্রিক বলেন, সাফল্যের গল্পগুলোর মাধ্যমে এ অঞ্চলে সেরা অনুশীলনগুলোর প্রতিরূপ বাস্তবায়নে দৃঢ় নজর দিতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা জিসিএ’র মাধ্যমে আমাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরব। আমি আশা করি আমরা যখন আমাদের সফলতার উদাহরণগুলো তুলে ধরব তখন অন্য অংশীদাররা এ বিষয়ে এগিয়ে আসবে।’
এ অঞ্চলে জলবায়ু সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সত্যিকারভাবে বাংলাদেশকে কোনো প্রতিশ্রুতি এবং সহায়তা করবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা এমনটা পেয়েছি তবে তা সীমিত।’
ড. মোমেন বলেন, ঢাকাতে জিসিএ কেন্দ্র হওয়াই এক ধরনের সমর্থন এবং আরও অনেক দেশ এগিয়ে আসবে বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। বাংলাদেশ একাই অনেক ভালো কাজ করছে।
বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০১৯ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় অভিযোজন কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে এবং এ দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ফোরাম ও ভালনারেবল টোয়েন্টি (ভি২০) গ্রুপ অব মিনিস্টারস অব ফিন্যান্স-এর বর্তমান সভাপতি।
গণমাধ্যমসহ সকলের সহায়তা চেয়ে পরারাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ লক্ষ্যে আমাদের প্রচার চালাতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা একই পৃথিবীতে বাস করছি। আমাদের বিশ্বকে রক্ষা করতে হবে। সে জন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। আমাদের অংশীদাররা বিশেষ করে যুক্তরাজ্য আমাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে আসছে।’
ড. মোমেন বলেন, ‘তবে তা প্রত্যাশার চেয়ে এখনও অনেক কম। অন্য অংশীদারদের কীভাবে এগিয়ে আসা উচিত সে বিষয়ে কথা বলতে হবে। এটি কেবল আমাদেরই সমস্যা নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং বৈশ্বিকভাবে একে মোকাবিলা করতে হবে। সব দেশকেই এগিয়ে আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
প্যাট্রিক বলেন, এ অঞ্চলের সরকার, অংশীদার ও উন্নয়ন অংশীদারদের প্রচেষ্টার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তারা কাজ করতে খুবই আগ্রহী। একসাথে কাজ করলে তা আরও সঙ্গতিপূর্ণ, শক্তিশালী এবং কার্যকর হবে।
বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ও সমর্থন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ডাচ সরকারের সমর্থন রয়েছে। তবে সামনের দিনগুলোতে জরুরি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা ও সাহায্য করার জন্য সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন রয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকায় দক্ষিণ এশীয়ার আঞ্চলিক কেন্দ্র গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন (জিসিএ) স্থাপনকে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাইলফলক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ।
অভিযোজন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং সবচেয়ে কার্যকর অনুশীলনগুলো সবার সাথে ভাগ করে নিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৮২ বছরব্যাপী ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ প্রণয়ন করেছে।
১৯৭০ সালে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের সময় এ দেশে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল।
তবে ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগ প্রস্তুতির অগ্রগতির কারণে ২০০৯ সালে একই ধরনের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মুখোমুখি হলেও সে সময় মাত্র ১৯০ জন মারা গিয়েছিল, বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ অঞ্চলে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার ক্ষেত্রে সফল এবং উল্লেখিত অগ্রগতি অর্জনে বাংলাদেশ তার প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবে বলে আশাবাদী।
গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় সিজিএ’র নতুন আঞ্চলিক কার্যালয় জিসিএ বাংলাদেশের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সিজিএ’র চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের অষ্টম মাহসচিব বান কি মুন এবং নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট উপস্থিত ছিলেন।
জলবায়ুর জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় কার্যকর অভিযোজনকে ত্বরান্বিত ও এগিয়ে নিতে দক্ষিণ এশীয়ার বিভিন্ন দেশের সরকার, সিটি মেয়র, ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী, সম্প্রদায় এবং সুশীল সমাজের সহায়তায় আঞ্চলিক কার্যালয় কাজ করবে।
বন কি মুন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠী সবচেয়ে উদ্ভাবনী হতে পারে তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। আমাদের নতুন জলবায়ু বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে জিসিএ বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী তাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সহায়তা করতে পারবে।’