পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘ ৯ দিনের ঈদ ছুটি কাটাতে বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকরা কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে আসা শুরু করেছেন। তাদের আশা, এ বছর কক্সবাজার পর্যটকের শহরে পরিণত হবে।
হোটেল-মোটেল মালিকরা জানান, ঈদের আগে থেকে টানা ৯ দিনের ছুটির কবলে পড়েছে দেশ। ৩১ মে বৃহস্পতিবার বিকালে থেকে দীর্ঘ এই ছুটি শুরু। এই সুযোগে ভ্রমণ পিপাসুরা দল বেঁধে কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছেন। এ কারণে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ঈদের আগে থেকে ভিড় বাড়ছে। ইতোমধ্যে সাগরপাড়ের সকল আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউসের কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
এদিকে পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন প্রশাসন। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশের পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা দম্পতি আলী রেজা-সেলিনা আক্তার জানান, তারা দুইজনই সরকারি চাকরিজীবী। অন্যান্য বছর ঈদের আগে থেকে ছুটি কম থাকায় ভ্রমণে যাওয়া হত না। এবার ঈদের আগে থেকে যেহেতু দীর্ঘ ছুটি রয়েছে তাই কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন। এবার কক্সবাজারে ঈদ পালন করবেন।

হোটেল মোটেল ওনার’স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সি-গাল হোটেলের প্রধান নির্বাহী ইমরুল সিদ্দিকী রুমী বলেন, সি-গাল, ওশান প্যারাডাইস, লংবিচ, সি প্যালেস, সায়মন বিচ রিসোর্ট, রয়েল টিউলিপ হোটেল অ্যান্ড স্পা, প্যাঁচার দ্বীপের ‘মারমেড ইকো বিচ রিসোর্ট’ ইনানির রয়েল টিউলিপ কক্সবাজারের নামিদামি এই তারকা হোটেলগুলোর ৫০-৬০ শতাংশ কক্ষ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বিদেশি এনজিও'র দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিরা দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছে। এসব তারকা হোটেলে পর্যটকের চাহিদা কম থাকলেও বাকি কক্ষগুলো প্রায়ই বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান জানান, দুই-তিন দিনের ছুটি পেলেই কক্সবাজারে পর্যটকে ভরে যায়। তাই এবার ৯ দিনের ছুটিতে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক আসবে। ঈদের আগেই প্রায় হোটেলে অধিকাংশ পর্যটক রয়েছে।
কক্সবাজার কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহমদ বলেন, সমিতির আওতাভুক্ত ১১৭টি কটেজ রয়েছে। কম দামে কক্ষ পাওয়া যায় বলে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন কটেজে ওঠেন বেশি। সব রুম বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন-টোয়াক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, নয়দিন ছুটির পেয়ে ভ্রমণ পিপাসুরা কক্সবাজারে ছুটে আসতে শুরু করেছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, সাফারি পার্ক, মেদাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্ক ও মহেশখালীর আদিনাথে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে।
তবে ঈদের পরদিন থেকে কক্সবাজার পর্যটকদের ভিড় আর বাড়বে বলে মনে করছেন পর্যটক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে কক্সবাজারের হোটেল মোটেলসহ প্রায় ৪০০টি আবাসাসিক কটেজের ৯০ ভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, পর্যটক হয়রানি রোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত'র নজরদারি রয়েছে।
তিনি বলেন, আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা ও ভেজাল খাবার পরিবেশন করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নেবে।
পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রস্তুত আছে। সৈকতের বালুচরে অত্যাধুনিক মোটরযানে টহলে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়া কক্সবাজার সৈকতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে পর্যটকদের রাতদিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা বিধান করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার শহরের বিনোদন কেন্দ্র ও শপিংমলে পুলিশের বাড়তি নজরদারি রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।
তিনি বলেন, শহরে চুরি-ছিনতাই বন্ধসহ পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশের একাধিক দল মাঠে রয়েছে।