এশিয়া মহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের কাছে পছন্দের শীর্ষে থাকা মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলো আজ যেন নীরবে কাঁদছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশটির সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটন এলাকাগুলো এখন ঢাকা পড়েছে বিশেষ নিরাপত্তার চাদরে।
পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা কুয়ালালামপুর, যেখানে পর্যটক আর রঙ-বেরঙের আলোর ঝলকানিতে মুখরিত থাকতো দিন রাত, সেই শহরও এখন জনশূন্য।
এছাড়া গেন্টিং হাইলান্ড, পুত্রজায়া, লঙ্কাউই, পেনাং, মালাক্কাসহ জনপ্রিয় সব পর্যটক অঞ্চলই এখন অবরুদ্ধ। অনেক প্রবাসীদের ব্যবসা ও কর্মসংস্থান যেসব শহর ঘিরে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত সেখানে সকল পর্যটক আসা-যাওয়াও এখন নিষিদ্ধ।
সকল বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তার পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। শুধুমাত্র ঔষধ ও প্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকার পরও, প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
শেষ কবে মালয়েশিয়া এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল, তা জানা নেই এখানকার স্থানীয়দের। ৬ লাখেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে মালয়েশিয়ায়, যার মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়।
তবে জরুরী অবস্থা জারির পর থেকে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ক্লাস নিচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে।
এছাড়া বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের অন্যতম উৎস এই দেশের বেশিরভাগ কলকারখানাই বন্ধ। চলছে না নির্মাণ কাজও। তবে মালয়শিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, বন্ধ থাকা অবস্থায়ও প্রত্যেক শ্রমিককে তার বেতন পরিশোধ করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে।
এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় থাকা কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিবছর রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে রেমিট্যান্সের হার বেড়ে যাওয়ার যে প্রবণতা লক্ষণীয় ছিল, করোনাভাইরাসের প্রভাবে এবার তা অনেকাংশেই কমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। দেশের সব রাজ্যের হাসাপাতালগুলোতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ডাক্তার ও নার্সদেরকে।
বৈশ্বিক এই মহামারীতে মালয়েশিয়া সরকারের নেয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যথাযথভাবেই সরকারি ঘোষণা মেনে চলছেন সবাই। সতর্ক রয়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরাও।
সংকটময় এই সময়ে সবাইকে কথা মনে রাখতে হবে যে, আপনি সুস্থ্য থাকলেই আপনার পরিবার সুস্থ্য থাকবে, সুরক্ষিত থাকবে দেশ।
সংশ্লিষ্টদের আশা, গোটা বিশ্বের সাথে মালয়েশিয়াও খুব শিগগিরই মুক্তি পাবে করোনাভাইরাস থেকে। পর্যটন কেন্দ্রগুলো আবারও পর্যটকে মুখরিত হবে। আলোর ঝলকানিতে প্রাণ ফিরে পাবে শহরগুলো। কাজে ফিরবেন প্রবাসীরা, বৃদ্ধি পাবে রেমিট্যান্স। এর মধ্য দিয়েই আগের রূপে ফিরবে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়া।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় এপর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ হাজার ১৮৩ জন। মারা গেছেন ৮ জন এবং সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন ১১৪ জন।
লেখক: শাহাদাত হোসেন, মালয়েশিয়া প্রবাসী সাংবাদিক