দেশে বছরে ৩৩ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে এক-চতুর্থাংশই নষ্ট হয়ে যায়। এই কারণে স্থানীয় চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। পেঁয়াজ নিয়ে এই সংকট মোকাবিলায় আশার আলো দেখাচ্ছে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’।
ইতোমধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে পেঁয়াজের এসি খ্যাত এই মেশিন। আর সুফল মেলায় খুশি সংশ্লিষ্টরা।
পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতার জেরে নেয়া পদক্ষেপের সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ। গত কয়েকবছর ধরে ক্রমাগত উৎপাদন বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী বাংলাদেশ। এরপরও ঘাটতি মেটাতে আমদানি করতে হচ্ছে বছর পর বছর। আর আমদানি কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়ে। আবার দাম পড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। তবে ঘাটতির অন্যতম কারণে হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে পেঁয়াজের অপচয় বা নষ্ট হওয়াকে।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমদানির কারণে দেশের অর্থ যেমন অপচয় হচ্ছে তেমনি ভালো দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চাষিরা।
আরও পড়ুন: বৃষ্টি অভাবে খুলনায় ফসল আবাদে নদীর পানি ব্যবহার
সনাতন পদ্ধতিতে বাঁশের মাচায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ হলেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, অধিক তাপমাত্রায় ও অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পে পচন ধরে যায়। এই প্রেক্ষাপটে উদ্ভাবন হলো ‘বায়ু প্রবাহ যন্ত্রের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ’প্রযুক্তি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায়ের পরামর্শক দলের উদ্ভাবিত ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’ব্যবহৃত হচ্ছে ফরিদপুরের বিভিন্ন গ্রামে। এই মেশিন স্থাপনে মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ পড়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুরের সদর ও সালথা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বেশ কিছু পেঁয়াজ চাষিকে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে দেখা গেছে। ছাদযুক্ত টিনের কিংবা ইটের ঘরের মেঝেতে ইট দিয়ে মাচা তৈরির পর ছিদ্রযুক্ত মাদুর বা বানা দিয়ে ঢেকে তার মধ্যে সাড়ে ছয় ফুট লম্বা ও ১৪ ইঞ্চি চওড়া একটি ভার্টিকাল সিলিন্ডার বসানো হয়েছে। এক হর্স পাওয়ারের একটি বৈদ্যুতিক মোটরযুক্ত করে পাখার সাহায্যে উপর থেকে বাতাস টেনে নিয়ে নামিয়ে নেয়ার পর আটকে থাকা বাতাস পেঁয়াজের মধ্যে দিয়ে বের হচ্ছে। ছোট্ট একটি কক্ষে এভাবে বাতাস প্রবাহ করে মজুদকৃত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে।