ইউএনবি জানতে পেরেছে যে সরকার এসব বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে চায়, যার মধ্যে তিনটি প্রবাসীদের জন্য এবং দুটি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সূত্র মতে, ভালো মুনাফা ছাড়াও এ বন্ডে প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের পরে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (সিআইপি) মর্যাদা পাবেন।
বিনিয়োগের নিয়ম আরও সহজ করতে বন্ডগুলোকে মার্কিন ডলার থেকে বহু মুদ্রায় রূপান্তরিত করা যাবে। এটি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের বন্ডে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সক্ষম হবে। তাদের অর্থ মার্কিন ডলারে রূপান্তর করার প্রয়োজন হবে না।
আরও পড়ুন: বন্ড, ঋণ মার্কেট বিকাশে আইএফসিকে সহযোগিতার আহ্বান
প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহকে উৎসাহিত করার জন্য বর্তমানে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড রয়েছে। জাতীয় সঞ্চয় বিভাগ এগুলো চালু করেছে।
অন্যদিকে, স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা ট্রেজারি বিল এবং ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।
সূত্রগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত সাফল্যের হার সন্তোষজনক না হওয়ায় মহামারির পর সরকার দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বিপুল প্রচারণার পাশাপাশি রোড শো’র আয়োজন করবে।
সম্প্রতি অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে এ বিষয়ে সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিডিএমসি) এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অর্থ সচিব বলেন, ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে বাংলাদেশি প্রবাসীদের বিনিয়োগ উন্নয়নের জন্য জরুরি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
তিনি সরকার থেকে সম্ভাব্য বরাদ্দের জন্য নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে নগদ ব্যবস্থাপনা এবং পূর্বাভাসের জন্য পৃথক মডিউল তৈরির ওপর জোর দেন।
বৈঠকে জানানো হয়, প্রবাসীরা প্রতিদিন দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন এবং সরকার দুই শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার টাকা পাঠানোর হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এ প্রবাসীদের যদি তাদের অর্থ স্ব স্ব তিনটি বন্ডে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করা যায় তবে এ ক্ষেত্রে তারা ইতিবাচক সাড়া দিতে পারেন।
বৈঠকে, সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং একইভাবে তা বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেয়া হয় যাতে প্রবাসীরা নিজ আগ্রহ এবং দেশপ্রেমের সাথে এ বন্ডগুলোতে বিনিয়োগ করেন।
সূত্র মতে, প্রবাসী যারা ছয় মাসের বেশি সময় ধরে নির্দিষ্ট তিনটি বন্ডে বিনিয়োগ করবেন এবং সেখান থেকে যদি কোনো মুনাফা না নেন, তাহলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তারা ১২ শতাংশ সুদ পাবেন।
একজন প্রবাসী তিনটি বন্ডে কত টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন সে বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। বন্ডগুলো স্থানীয় ব্যাংকগুলোর বিদেশি শাখা, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা এবং অনুমোদিত ফরেন এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোতে পাওয়া যায়। বন্ডগুলোর বিপরীতে যেকোনো স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণও নেয়া যাবে।
আরও পড়ুন: আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে আরও ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
যে বিনিয়োগকারীরা ওয়েজ আর্নার্স ডেভলপমেন্ট বন্ডে আট কোটি বা তার বেশি টাকা বিনিয়োগ করবেন তাদের বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (সিআইপি) মর্যাদা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বন্ডের মেয়াদ পাঁচ বছর, একজন ব্যক্তি ২৫ হাজার থেকে ৫০ লাখ টাকা এতে বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং প্রতি ছয় মাস পর মুনাফা তুলতে পারবেন।
মার্কিন ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের মেয়াদ তিন বছর, এতে বিনিয়োগের মাত্রা ৫০০ থেকে ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর মুনাফা ৭.৫ শতাংশ এবং প্রতি ছয় মাস পর তা তোলা যাবে।
ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডও তিন বছরের মেয়াদি। মুনাফার হার ৬.৫ শতাংশ এবং এ বন্ডে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
এনবিআরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, প্রবাসীদের কাছ থেকে আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য রোড শো এবং ব্যাপক প্রচারণার এ উদ্যোগ ‘একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ’।
তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা যদি বন্ডগুলো সম্পর্কে আরও বেশি ধারণা পান তাহলে এটি তাদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে।’