বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার্স ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ৮০ শতাংশ ফ্রিল্যান্সারের হাতে এখন কোনো কাজ নেই।’
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের ২০১৭ সালের অনলাইন শ্রম সূচক অনুসারে, বিশ্ব জুড়ে অনলাইন কাজের প্রায় ১৬ শতাংশ কাজ বাংলাদেশ থেকে করা হয়। ভারতের ২৪ শতাংশের পরে যা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের ফলে এ সেক্টরটি দিন দিন বড় হয়ে উঠছে। তরুণদের অনেকে এখন ফ্রিল্যান্স, আউটসোর্সিং এবং ই-কর্মাসকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলেছে, অপ্রচলিত খাতে বাংলাদেশের প্রায় ৮৯ শতাংশ যুবক নিয়োজিত এবং মহামারির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন প্রায় দুই কোটি তরুণ।
চাকরি হারানো এসব বেকার যুবকদের সরকারের আর্থিক সহায়তা দেয়া উচিত বলে মনে করছেন স্টেক হোল্ডাররা।
এ খাতকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত উদ্দীপনা প্যাকেজের আওতায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে বিএফডিএস’র সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করে। ভবিষ্যতে আমাদের এ খাতটি ১০০ কোটি ডলারের বাজার হবে। তাই সরকারকে একটি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এ খাতের মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে এবং এ খাতে নিয়োজিতদের সহায়তা করতে হবে।’
সবচেয়ে খারাপ সময়
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল জানিয়েছে, গত শতাব্দীর ১৯৩০-এর দশকের মন্দার চেয়ে খারাপ সময়ের মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্ব। এদিকে, করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে দেশব্যাপী ঘোষিত শাটডাউনে বাংলাদেশ সকল অ-জরুরি খাত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মহামারি কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউন ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে কারখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়ে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।
কাটআউটউইজ লিমিটেডের সিনিয়র ইমেজ এডিটর কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।’
বেকার হয়ে পড়াদের বাঁচাতে সরকারের কাছে সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজ না থাকায় বাংলাদেশের অনেকে গ্রাফিক্স সংস্থা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। এসব সংস্থায় নিয়োজিত অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন।’
বিজেডএম গ্রাফিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আপেল মাহমুদ বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর কারণে গত কয়েক মাসে ৬০-৭০ শতাংশ কাজের অর্ডার কমেছে।’
কমপক্ষে তিন মাসের ইন্টারনেট এবং বিদ্যুত বিল মওকুফ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০০ জন কাজ করত। পর্যাপ্ত কাজের অর্ডার না থাকায় এ সংখ্যাটি এখন ১২০ জনে নেমে এসেছে।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (ব্যাকো) সেক্রেটারি জেনারেল তৌহিদ হোসেন বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই আউটসোর্সিং খাতে ধস নামা শুরু হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি আরও দুই মাস অব্যাহত থাকলে ৮০ শতাংশ কাজের অর্ডার কমে আসবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত এক মাসে আমাদের কাজ প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ কমে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে ১৫১টি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাদের অনেকে চাকরি হারিয়ে এবং কঠিন সময় পার করছেন। এসময় সরকারও আমাদের কাজ দিতে পারেন।’
ঝুঁকিতে আছেন তরুণরা
সানেমের রির্সাচ ইকোনোমিস্ট জুবায়ের হোসেন বলেন, যুবকরাই বেশিরভাগ স্টার্টআপগুলো চালাচ্ছেন যারা করোনাভাইরাসে সৃষ্ট হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, মহামারির কারণে ফ্রিল্যান্সারদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম যথেষ্ট কমে এসেছে। যার ফলে তাদের আয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।
দেশের এ স্টার্টআপগুলোর জন্য নির্দিষ্ট উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণার উপর জোর দেন তিনি।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বলছে, তাদের ১,২০০ জন উদ্যোক্তা সদস্য রয়েছেন যেখানে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার জনবল কাজ করছে। বাংলাদেশে ৮ হাজার কোটি টাকার ই-কর্মাসের বাজার রয়েছে।
এপ্রিল থেকে এই খাতে ৬৬৬ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে দাবি করে ই-ক্যাব জানায়, দেশের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২ শতাংশ। প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার পরিবার ই-কমার্স সাইটগুলো থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন। তবে করোনাভাইরাসের কারণে ৮৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বলেও দাবি এ সংস্থাটির।
ই-ক্যাব উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাংসদ নাহিম রাজ্জাক বলেন, দেশে ই-কমার্স শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এ মুহূর্তে এই শিল্পটি প্রায় ১৩০ কোটি ডলারের। দুই হাজার ই-কমার্স উদ্যোক্তা এখন এ খাতে যুক্ত আছেন। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে ভবিষ্যতে এ খাতে আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে।’