ভাঙনের কারণ হিসেবে গ্রামবাসী বলছেন, সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলায় যাদুকাটা নদীর এই শাখা থেকে বালি ও পাথর উত্তোলনের ফলে ২০০৪ সাল হতে এই দুটি গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়ে। এছাড়া প্রতি বছর পাহাড়ি ঢল নদী ভাঙনের অন্যতম কারণ। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে আগামী বর্ষায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ইতোমধ্যে গ্রাম দুটির ৩০০ বিঘার বেশি আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলের বাগান, বাঁশঝাড়, জমিজামা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বেশির ভাগ মানুষ। তাছাড়া প্রতি বছর বন্যায় নদী থেকে বালু এসে ফসলি জমিতে পড়ে চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে দুই-তিন বছরের মধ্যে দুটি গ্রামই বিলীন হয়ে যাবে। গ্রাম দুটি রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
নদী ভাঙন রোধে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
নদীপাড়ের মানুষদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আশ্বাসের বাণী শোনালেও ভাঙন রোধে আজও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তারা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নদী ভাঙনের তীব্রতা দেখে তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলোর অনেকেই বাড়িঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলছেন। অনেকেই আবার মূল্যবান সব গাছপালা কেটে ফেলছেন।
ডালারপাড় গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০০৪ সাল হতে নদী ভাঙন শুরু হয়। গত কয়েক বছরে অব্যাহত ভাঙনে ডালারপাড় ও বাগগাঁও গ্রাম দুটি আকারে অর্ধেক হয়ে গেছে। নদীর করাল গ্রাসে কিছু বাদ যাচ্ছে না। ভাঙনের ফলে কোটি টাকার সম্পদ চিরতরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাগগাঁও গ্রামের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন মসজিদটি বিলীন হয়ে গেছে।
‘আমরা এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন মহলের কাছে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো প্রকার সুফল পাইনি,’ বলেন তিনি।
কুড়িগ্রামে বন্যা ও নদী ভাঙনে বিলীন ১০ বিদ্যালয়
বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘গত বর্ষাকালে আমি আমার নিজ অর্থায়নে ভাঙনকবলিত নদীর পাড়ের বেশ কিছু জায়গায় বাঁশ, বস্তা দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করেছি। এলাকাবাসীর পক্ষে কর্তৃপক্ষের কাছে আমার দাবি যত দ্রুত সম্ভব্য সিসি ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে দুটি গ্রামকে রক্ষা করা হোক।’
বাগগাঁও পুরাতন জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদ আলম জানান, ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হলেই বর্ষা মৌসুমে যাদুকাটা নদীতে বন্যার সৃষ্টি হয়ে ভয়াবহ ভাঙন পরিস্থিতি হয়। বিষয়টি সমাধানে এলাকাবাসীর পক্ষে বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ছুটে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু গত ১৫ বছরে কোনো সুফল মিলেনি।
নদী ভাঙন স্থায়ীভাবে রোধে ডেল্টা প্লান: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সফর উদ্দিন বলেন, ‘নদী ভাঙন প্রতিরোধে আমি জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলেছি। এই দুটি গ্রামের ভাঙন প্রতিরোধে উপজেলা পরিষদ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করার প্রয়োজন আমরা করব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিউর রহিম জাদিদ বলেন, ‘এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন লেভেলের বাইরে। যদি ডিজাইন লেভেলের ভেতরে থাকে তাহলে ভাঙন প্রতিরোধে আমরা কাজ করব।’
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, ‘জেলার ভাঙন কবলিত যেসকল জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ছিল সেসব এলাকার জন্য একটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি। এছাড়াও অন্যান্য ভাঙনকবলিত এলাকায় একটি নতুন প্রকল্প তৈরির জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পরিদর্শনে আসলে তখন আমরা ভাঙন নিয়ে একটি প্রতিবেদন করব।’
মধুমতি নদী ভাঙনে দিশেহারা নড়াইলের ইতনা ইউনিয়নের ৪ গ্রামের মানুষ