আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার ২০১৯ বিজয়ী ছয়টি প্রকল্পের নাম ঘোষণা করা হয় ২৯ আগস্ট। বিজয়ীরা ১০ লাখ ডলার ভাগাভাগি করে নেবে।
বাংলাদেশ ছাড়াও বিজয়ী বাকি পাঁচ প্রকল্পের দেশগুলো হলো বাহরাইন, ফিলিস্তিন, রাশিয়া, সেনেগাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
প্রতি তিন বছর পর পর আয়োজিত এবারের পুরস্কার (২০১৭-১৯) বিতরণী অনুষ্ঠানটি হতে যাচ্ছে ১৪তম আয়োজন।
আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচারের জন্য বিজয়ী নির্ধারণের নিয়ম অন্যান্য স্থাপত্য পুরস্কারের চেয়ে ভিন্ন। এটি শুধুমাত্র স্থপতিদের পুরস্কৃত করে না, সেই সাথে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা স্থানীয় সরকার, নির্মাতা, গ্রাহক, মূল কারিগর ও প্রকৌশলীদেরও এতে সংযুক্ত করে থাকে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও বিশিষ্টজনসহ আন্তর্জাতিক অতিথি, ২০১৯ সালের পুরস্কার বিজয়ী প্রকল্পের স্থপতি, গ্রাহক ও অবদান রাখা অন্যরা, অ্যাওয়ার্ডস স্টিয়ারিং কমিটি ও মাস্টার জুরির সদস্য, প্রকল্পের সমালোচক, সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা স্থপতি, আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার, আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক ও ইসমাইলি লিডারস ইন্টারনেশন্যাল ফোরামের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সদস্য এবং স্থাপত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টজনরা অংশ নেবেন।
মুসলিমদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি থাকা সমাজে প্রয়োজন ও আকাঙ্ক্ষা সফলভাবে পূরণ করতে পারা নির্মাণের ধারণা চিহ্নিত করতে ও উৎসাহ দিতে মহামান্য আগা খান ১৯৭৭ সালে এ পুরস্কারের প্রচলন করেন।
বাংলাদেশ থেকে এবারের বিজয়ী প্রকল্পটি হলো ঢাকার কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ কানারচরের আর্কেডিয়া অ্যাডুকেশন প্রজেক্ট। প্রকল্পটির স্থপতি সাইফ উল হক এবং এর গ্রাহক মালেকা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, ঢাকা।
প্রকল্পের বর্ণনা
যুক্তরাজ্যে চার দশক পড়ানোর পর বাংলাদেশে ফিরে আসেন রাজিয়া আলম। দেশে এসে তিনি পেনশন তহবিল দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন স্কুল। সেখানকার জায়গার ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে স্থায়ী স্কুল নির্মাণের জন্য নদীর তীরে জমি কেনেন তিনি। সেই জমি বছরের এক-তৃতীয়াংশ সময় ডুবে থাকত বর্ষার ৩ মিটার পানির নিচে।
রাজিয়ার পরিচিত স্থপতি সাইফ ভবন তৈরির জন্য বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি করে মাটি ভরাট বা শুষ্ক মৌসুমে বেশি উঁচু হয়ে যাওয়া পিলার নির্মাণ না করে সমাধান হিসেবে এক উভচর স্থাপনার পরিকল্পনা করেন। যা ঋতু অনুযায়ী মাটিতে বসানো থাকবে আবার পানিতে ভাসতেও পারবে।
স্কুল ভবনের জায়গাটিতে সুরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে বালি ও মাটি ভর্তি ব্যাগ এবং স্থানীয় ইট ব্যবহার করে। সেই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে টায়ার। স্কুলের বিভিন্ন আলাদা কিন্তু পরস্পরের সাথে সংযুক্ত কাঠামোগুলোর নোঙ্গরের জন্য রয়েছে বাঁশের থাম, যা ভূমিতে ২ মিটার প্রোথিত। কাঠামোগুলোর মাঝে আছে শ্রেণিকক্ষ, অফিস, খোলা জায়গা, টয়লেট, সেপটিক ট্যাঙ্ক ও পানির ট্যাঙ্ক এবং সব জায়গায় যাওয়ার জন্য একটি বারান্দা।
তিন ধরনের বাঁশ ব্যবহার করে নির্মিত এ স্কুল ভাসিয়ে রাখার জন্য বাঁশের কাঠামোর ভেতরে ব্যবহার করা হয়েছে ইস্পাতের ড্রাম। বাঁশগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে পাশের গ্রামগুলো থেকে। ব্যবহৃত উপকরণগুলো যাতে পচে না যায় সে জন্য ব্যবহার করা হয়েছে রাসায়নিক সামগ্রী। সেই সাথে পানি নিরোধ করার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছে গাবের কষ। জোড়া দেয়ার কাজে মরিচা ধরে যাওয়া জিআই তার ব্যবহার না করে রশি কাজে লাগানো হয়েছে।