করোনার হটস্পটখ্যাত এই জেলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করলেও তা উপেক্ষা করেই হাটের ইজারা সম্পন্ন হচ্ছে। পুরো জেলায় ৪৩টি পশুর হাট ইজারা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার সিদ্ধিরগঞ্জে পাঁচটি ও বন্দরে দুটি পশুর হাটের ইজারা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এলাকায় ১১টি পশুর হাট বসছে এবার।
গত ১৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জে পশুর হাট না বসাতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির ফোকাল পয়েন্ট এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামীমা নাসরীন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ১৪তম সভার সুপারিশে জানানো হয় যে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি এবং এ অবস্থায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধ জীবনযাত্রা উদ্বেগজনক। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পশুর হাট বসার ক্ষেত্রে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ হলো-সংক্রমণের হার বেশি থাকায় নারায়ণগঞ্জে যেন পশুর হাট স্থাপন করা না হয়। এক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার পরামর্শ দেয়া হয়।
গত ৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জে প্রথম তিনজন করোনা রোগী শনাক্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনার যাত্রা শুরু হয়। শনিবার পর্যন্ত এ জেলায় ৫ হাজার ৭৪১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া ১২৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বলছেন, সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে একাধিক শর্তে সাতটি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়েছে। গত বছর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ২১টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা দেয়া হয়েছিল। করোনার কারণে এবার ২১টি থেকে কমে এসেছে সাতটিতে। সিটি করপোরেশনের মূল শহরে এবার কোনো পশুর হাট বসছে না।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে চারটি, সদর অঞ্চলে একটি ও কদম রসুল অঞ্চলে দুটি হাটের অনুমতি দেয়া হয়েছে। পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ সাতটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় ১১টি ও রূপগগঞ্জ-সোনারগাঁ ও আড়াইহাজারে ১৫টি হাট বসবে।
এবার সিদ্ধিরগঞ্জে ৫নং ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার রোডর পাশে, ৬নং ওয়ার্ড এসও রোড বটতলায়, ৮নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম টেক্সটাইল মিলস মাঠ, ৯নং ওয়ার্ডে জালকুড়ি টিসি রোডে, ১০নং ওয়ার্ডে লক্ষীনারায়ণ কটন মিলস এলাকায় ও বন্দরের ২৪নং ওয়ার্ডে নবীগঞ্জ বাজারে এবং বন্দরে ২৭ নং ওয়ার্ডে ফুলহরে বসবে পশুর হাট।
এ বিষয়ে জেলা করোনা ফোকাল পার্সন ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়েছে, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নারায়ণগঞ্জে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দুটোই কমে আসছে। কিন্তু কোরবানির পশুর হাট সে অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
এদিকে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন নির্ধারিত স্থানে বসতে শুরু করেছে অস্থায়ী পশুর হাট। গতবারের তুলনায় এবার অনেক কম হাট ইজারা দেয়া হয়েছে, ফলে এবার জেলায় হাটের সংখ্যা অনেক কম। এর মধ্যে শহরের মধ্যে কোনো অস্থায়ী পশুর হাট বসতে দেয়া হয়নি।
শুক্রবার শহরের ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের একাধিক হাট ঘুরে দেখা যায়, হাট বসাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাট কমিটির লোকজন। ইতোমধ্যে কয়েকটি হাটে গরু আসতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল ২ নম্বর ঢাকেশ্বরী হাটে দেখা যায়, সেখানে অনেক গরু এসেছে। এসব গরু হাটের বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে। অনেকে গরু কিনতেও আসছেন। তবে এখন দর্শনার্থীই বেশি।
ফতুল্লা ডিআইটি মাঠের হাটে দেখা যায়, সেখানে বাঁশ বাঁধা হয়েছে। এ হাটেও অনেক গরু আসছে। নদীপথে গরু নামিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এবার পর্যাপ্ত জায়গা রেখেই হাটে গরু বাধা হচ্ছে যেন মাঝপথে মানুষ চলাচল করতে পারে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে। প্রতিটি হাটেই চলছে অস্থায়ী হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, জীবাণুনাশক সুড়ঙ্গসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে বিভিন্ন কার্যক্রম। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এসব নিয়ম মেনেই হাটে এবার গরু কিনতে আসতে হবে ক্রেতাদের।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি কি কি মানতে হবে সেগুলো ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করেছি। এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটগুলো চলবে।’