পর্যটন বিকাশের নামে পরিবেশের প্রতি খেয়াল রেখে এখানে ইকো-ট্যুরিজম বিকাশের কথা থাকলেও ভ্রমণের নামে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক হাওরের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরছে বেড়াচ্ছেন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপার লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর।
জানা গেছে, ‘ছয় কুড়ি বিল নয় কুড়ি কান্দা’ নিয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায়। প্রয় ১০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জলাধারটি প্রধান আকর্ষণ জীববৈচিত্র্য। সুউচ্চ মেঘালয় পাহাড়ঘেঁষা দৃষ্টিনন্দন এই জলাভূমিতে রয়েছে ২৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ, ১৫০ প্রজাতির সরিসৃপ এবং হাজারেরও বেশি প্রজাতির অমেরুদণ্ড প্রাণী।
শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ৫১ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে এই হাওরে। তবে ইতোমধ্যে ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে 'পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা' চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০০০ সালে ২০ জানুয়ারি এ হাওরকে ‘রামসার সাইট’ হিসেবে ঘোষণার পর বিশেষ ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে এই হাওরকে আসতে হয়। তবে সবাই এই নিয়ম ঠিকভাবে মানছে না বলে হাওরটি বিপন্ন দিকে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর আগে টাঙ্গুয়ার হাওরের চারপাশের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি লক্ষ্যে পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়। হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসছে। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এই হাওরের বৈচিত্র্যের দিকে খেয়াল না করে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান পর্যটকেরা। উচ্চ শব্দে গানবাজনা চলে। আয়োজন করা হয় জোস্না উৎসব। আর হাওরের পানিতে পর্যটকদের ব্যবহৃত পলিথিনসহ নানা ধরনের ময়লা আবর্জনা অবাদে ফেলা হয়। এতে দিন দিন হাওরের পানির স্বচ্ছতা হারিয়ে দূষিত হচ্ছে। এতে দিন দিন বিলুপ্ত হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া দেশীয় প্রজাতির অনেক সুস্বাদু মাছও।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ সকল জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারকে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে রাখার দাবি জানান সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরকে ইকো-ট্যুরিজমের আওতায় নিয়ে এসে এটিকে সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। পাশপাশি রামসার সাইট নামক এই টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইকো-ট্যুরিজম পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প বিকাশের কথা ভাবা হচ্ছে।