তিনি বলেন, তাদের জোট সঠিকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেনি কারণ তাদের নেতা-কর্মীদের ক্রমাগত গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রতিপক্ষ বিভিন্ন ধরনের হামলা ও বাধার সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে ‘ষড়যন্ত্রের’ অংশ হিসেবে তাদের অনেক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে ইউএনবির জেলা প্রতিনিধিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মির্জা ফখরুল তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রত্যাশা, তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের আর কোনো প্রত্যাশা নেই। এ নির্বাচনে ইতিমধ্যে যে জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, এটি পুরোপুরি একটি মকারিতে (তামাশা) পরিণত হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত যা দেখছি, নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমে যা দেখছি, সেটি পুরোপুরি তামাশা হয়ে গেছে। রাষ্ট্র, সরকার, নির্বাচন কমিশন একসাথে নির্বাচনকে একটি তামাশায় পরিণত করতে চলেছে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই নির্বাচনে যোগ দিয়েছে। তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তাদের মধ্যে চক্রান্তের অংশ হিসেবে প্রায় ৩০-৩৫ জনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি আসনে সন্ত্রাস, ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, আওয়ামী সন্ত্রাস এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ ভোটাররা রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।’
‘নির্বাচনের প্রচার অভিযানে ঐক্যফ্রন্টের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়ার মতো নয়, এটি সাংগঠনিক দুর্বলতা কিনা’, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের (সাংবাদিকদের) এ ধরনের প্রশ্ন আমাকে খুব ব্যথিত করে। আপনারা সবসময় বিরোধী দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা দেখতে চান। কিন্তু সরকার যে গণতন্ত্রের সমস্ত পথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, সরকার যে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করছে, সরকার যে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা দিয়ে প্রতিদিন গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে, মাঠশূন্য করে ফেলছে, সে ব্যাপারে আমি আপনাদের প্রশ্ন করতে দেখি না।’
ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বলেন, তারা ২৭ ডিসেম্বর রাজধানীতে প্রাক নির্বাচনী সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দেয়নি।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘ঢাকার বেশির ভাগ আসনে এমন ত্রাস চলছে, সেই ত্রাসের সামনে কোনো সভ্য, ভদ্র মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।’
নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট জয়লাভ করলে প্রধানমন্ত্রী পদে কাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের জোট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
ক্ষমতায় আসলে নিজের ভূমিকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘আমি রাজনীতি করি। জোট জয়ী হলে, জনগণের জন্য কাজ করবো।’
নির্বাচনে হেরে গেলে দলের পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন,‘এটি তো কোনো নির্বাচনই নয়। এখানে হার-জিতের প্রশ্ন নেই। এখানে একপক্ষ পুরো তাদের শক্তি দিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জয়কে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।’
বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন পদ্ধতিতে মানুষের কোনো আস্থাই নেই। এখানে নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্র প্রশাসন একজোট হয়ে এই নির্বাচনকে একটি তামাশায় পরিণত করেছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র এখন পুরোপুরি মৃত। তাকে আবার জীবিত করা সহজ কথা নয়।’
সবশেষে মির্জা ফখরুল বলেন, সামনের বছরগুলোতে তিনি একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চান।