ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের গ্রাম হ্রোজার একটি ক্যাফেতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রুশ রকেট হামলায় কমপক্ষে ৫১ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং কিয়েভের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, কয়েক মাসের মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক হামলার মধ্যে বৃহস্পতিবারেরটি অন্যতম।
উদ্ধারকারীরা হ্রোজা গ্রামের একমাত্র ক্যাফের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি যখন আঘাত হানে তখন শিশুসহ কমপক্ষে ৬০ জন ক্যাফেটিতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, জেলেনস্কি ইউক্রেনের মিত্রদের সমর্থন জোগাড় করতে স্পেনে প্রায় ৫০ জন ইউরোপীয় নেতার উপস্থিতিতে ‘গ্রানাডা সম্মেলন’-এ যোগ দিয়েছেন।
সেখানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি রাশিয়ার এই ধরনের হামলাকে ‘নৃশংস রুশ অপরাধ’ এবং ‘সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড’ বলে নিন্দা করেছেন।
কিয়েভ থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গ্রামটিতে একটি ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে ২০০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়ের এই হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, এটি প্রমাণ করে, কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ইউক্রেনের সাহসী জনগণকে তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে, তাদের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে সহায়তা করার জন্য সবকিছু করতে পারে।’
খারকিভের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় গ্রাম হ্রোজায় যুদ্ধের আগে প্রায় ৫০০ জন বাসিন্দা ছিল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া এই অঞ্চল দখল করে, এরপর ইউক্রেন তার এই অঞ্চলটি পুনরুদ্ধার করে।
এটি রাশিয়ান সামরিক হামলার মূল লক্ষ্য কুপিয়ানস্ক থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) পশ্চিমে অবস্থিত।
জেলেনস্কি মঙ্গলবার সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করতে এবং পশ্চিমের সরবরাহ করা সরঞ্জাম পরিদর্শন করতে এই এলাকা পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা দিমিত্রো নেচভোলট দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, তিনি তার ৬০ বছর বয়সী বাবাকে খুঁজছেন।
নেচভোলট জানান, তার বাবার লাল গাড়িটি তখনও ক্যাফের কাছাকাছি পার্ক করা ছিল। তার বাবা জীবিত নাকি মৃত তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি অপেক্ষায় আছেন।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি স্পেনের গ্রানাডায় ইউরোপের রাজনৈতিক নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে পশ্চিমা সমর্থন বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ান সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৭
জেলেনস্কি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাশিয়া শুধু একটি কারণে এইরকম সন্ত্রাসী হামলা করছে, তা হলো তার গণহত্যামূলক আগ্রাসনকে পুরো বিশ্বের জন্য নতুন আদর্শে পরিণত করা।’
তিনি আবও বলেন, ‘এখন আমরা ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। বিশেষ করে আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করা, আমাদের সৈন্যদের শক্তিশালী করা, আমাদের দেশকে সন্ত্রাস থেকে রক্ষা করা। আমরা সন্ত্রাসীদের জবাব দেবো।’
সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেন, জার্মানি ইউক্রেনকে আরেকটি প্যাট্রিয়ট মিসাইল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সরবরাহ করবে।
তিনি আশঙ্কা করেন, রাশিয়া আবার শীতের মাসগুলোতে ইউক্রেন জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও শহরগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাবে।
গত শীতকালে রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি ব্যবস্থা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে নিরবচ্ছিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। যার ফলে ইউক্রেনজুড়ে বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট শুরু হয়।
ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উচ্চ মাত্রার স্থিতিস্থাপকতা ও নমনীয়তা দেখিয়েছে। তবে শীতকাল ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া আবারও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উপর হামলা চালাবে বলে উদ্বেগ বাড়ছে।
জেলেনস্কি উল্লেখ করেছেন, গ্রানাডা শীর্ষ সম্মেলনে কৃষ্ণ সাগরে ‘বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা এবং নৌ চলাচলের স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য যৌথ দায়িত্ব’ এর উপরও আলোকপাত করা হবে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর গোয়েন্দা তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, রাশিয়া ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে বেসামরিক শিপিং লক্ষ্যবস্তুতে সামুদ্রিক মাইন স্থাপন করতে পারে এবং তারা ইউক্রেনের উপর দোষারোপ করতে পারে।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৪ জন নিহত
এর আগে বৃহস্পতিবার ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় রাশিয়া।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী বলেছে, দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ইরানের তৈরি ২৯টি ড্রোনের মধ্যে ২৪টি জব্দ করেছে। রাশিয়া যেগুলো ওডেসা, মাইকোলাইভ ও কিরোভোহরাদ অঞ্চলে চালাচ্ছে।
কিরোভোহরাদ আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান আন্দ্রি রায়কোভিচ বলেছেন, এই অঞ্চলে একটি অবকাঠামোতে আঘাত করা হয়েছিল। আগুন নেভানোর জন্য জরুরি পরিষেবাগুলো মোতায়েন করা হয়েছিল, তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, গত দিন অন্যান্য রাশিয়ান হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসনে দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় এবং পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের ক্রাসনহোরিভকা শহরে হামলায় একজন মারা যায়। এসময় কমপক্ষে আটজন আহত হয়েছেন।
আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ওলেক্সান্ডার প্রোকুদিনের মতে, খেরসন অঞ্চলের বেরিসলাভ শহরের একটি হাসপাতাল রুশ হামলায় ধ্বংস হয়েছে এবং দুই চিকিৎসাকর্মী আহত হয়েছে।
ইউক্রেনও সীমান্তজুড়ে নিয়মিত ড্রোন হামলা করে রাশিয়াকে বিপর্যস্ত করেছে।
ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে গভর্নর রোমান স্টারোভয়েট বলেছেন, ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার ফলে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী সীমান্ত শহর রিলস্কে কামান ছুঁড়েছে, এতে একজন বাসিন্দা আহত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।