ফিলিপাইনে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ট্রামির প্রভাবে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে মৃত ও নিখোঁজের সংখ্যা প্রায় ১৩০ জনে পৌঁছেছে। অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং সেসব এলাকার বাসিন্দাদের উদ্ধার করা প্রয়োজন বলে জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র।
ফিলিপাইনের সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় দ্বীপপুঞ্জে চলতি বছরে এ পর্যন্ত আঘাত হানা সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক এই ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ৯০ জন নিহত ও ৩৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শনিবার বাতাঙ্গাস প্রদেশের হ্রদ তীরবর্তী শহর তালিসে থেকে নিখোঁজ হওয়া এক গ্রামবাসীকে মাটি খুঁড়ে বের করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে তালিসের সাম্পালোক গ্রামের একটি জঙ্গলাকীর্ণ শৈলশিরার খাড়া ঢাল থেকে কাদা, পাথর ও গাছের স্তূপে বেশ কয়েকটি লাশ পাওয়া যায়।
শনিবার ম্যানিলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় একটি অঞ্চল পরিদর্শন করে প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস বলেন, ঝড়ের কারণে অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে - যার মধ্যে কিছু অঞ্চলে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক থেকে দুই মাসের সমান বৃষ্টিপাত দেখা গেছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান মার্কোস।
তিনি আরও বলেন, 'পানি অনেক বেশি। আমাদের উদ্ধার কাজ এখনও শেষ হয়নি। অনেক এলাকা এখনও বন্যার কবলে রয়েছে এবং সেখানে বড় ট্রাকও পৌঁছানো যাচ্ছে না সেজন্য উদ্ধারে বিলম্ব হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ফিলিপাইনে মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়ে নিহত ২০, নিখোঁজ ১৪
ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে কয়েকটি প্রদেশের ৫ লাখ মানুষ ৬ হাজার ৩০০টিরও বেশি জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
ট্রামিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮২৫ মিলিয়ন পেসো (প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। কৃষিখাতে ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৪৩২ বিলিয়ন পেসো (২৪.৫ মিলিয়ন ডলার)।
এদিকে তৃতীয় দিনের মতো স্কুল ও সরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। আন্তঃদ্বীপ ফেরি পরিষেবাও স্থগিত করা হয়েছে, হাজার হাজার লোক আটকা পড়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্যবর্তী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপপুঞ্জ ফিলিপাইনে প্রতি বছর প্রায় ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। ২০১৩ সালে, টাইফুন হাইয়ান, সবচেয়ে শক্তিশালী রেকর্ড করা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি, যার ফলে ৭ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি লোক মারা বা নিখোঁজ হয়েছিল এবং পুরো গ্রাম চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।
ঝড়টি এই সপ্তাহের শেষে ভিয়েতনামে আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।