স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি, দেশটির রাষ্ট্রপতি ইউ উইন মিন্ট এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সামরিক বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়।
দেশটির সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থা চলাকালীন ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনকে সংস্কার করা হবে এবং গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনা করা হবে।
সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন মায়াওয়াদ্দি টেলিভিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জরুরি অবস্থা জারি করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাবাহিনীর সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইংয়ের হাতে।
২০২০ সালের ৮ নভেম্বর মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি হয়েছে জানিয়ে, নতুন সংসদ অধিবেশন স্থগিতের দাবি জানিয়েছে সামরিক বাহিনী।
তবে গত সপ্তাহে সেনাবাহিনীর এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন।
প্রসঙ্গত, সামরিক অভ্যুত্থানের হুমকির বিষয়ে উদ্বেগের মধ্যেই দেশটির নতুন সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে জরুরি অবস্থা জারির এ ঘোষণা এসেছে।
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে মিয়ানমার: সু চি, প্রেসিডেন্ট আটক
সু চি, প্রেসিডেন্টকে আটকের ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের নিন্দা
সু চিসহ আটক মানবাধিকার কর্মীদের মুক্তি দিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান
দেশটির প্রতিষ্ঠিত অনলাইন নিউজ সার্ভিস, ইরাওয়াদ্দি জানিয়েছে যে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এবং দেশটির রাষ্ট্রপতি ইউ উইন মিন্টকে সোমবার ভোরে আটক করা হয়েছে। নিউজ সার্ভিসটি সু চির ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) মুখপাত্র মায়ো নিন্টের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, আইন প্রণেতা এবং আঞ্চলিক মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, সোমবার ভোরে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হচ্ছে এবং স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে গৃহবন্দী করে আটক করা হয়েছে, রাজধানীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
আরও পড়ুন: সু চি’র সাথে বরিস জনসনের আলোচনা, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: সু চির অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম
নেপিডোতে ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টিতে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য দেশ এই খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, ‘বার্মার সেনাবাহিনী স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এবং অন্যান্য বেসামরিক কর্মকর্তাদের আটকসহ দেশটির গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বিনষ্ট করার পদক্ষেপ নিয়েছে, এমন খবরে আমেরিকা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।’ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। বার্মা মিয়ানমারের পূর্ব নাম।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করতে বা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধা দেয়ার যেকোনো প্রয়াসের বিরোধিতা করছে এবং এই পদক্ষেপ থেকে সরে না আসলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন সু চি এবং আটক অন্যদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। ‘আমরা ২০২০ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় পরিষদের শান্তিপূর্ণ পুনর্গঠনকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি,’ তিনি বলেন।
গত বছরের নির্বাচনের পর সোমবার মিয়ানমারের আইন প্রণেতাদের সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য রাজধানী নেপিডোতে জড়ো হওয়ার কথা ছিল।