তিনি জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে বলেন যে কয়েক লাখ মুসলিমের দেশত্যাগের ঘটনাটি ছিল বিদ্রোহীদের সাথে এক লড়াইয়ের দুর্ভাগ্যজনক ফলাফল।
২০১৭ সালে সেনাবাহিনী বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা, নারীদের ধর্ষণ ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল বলে যে অভিযোগ রয়েছে তা খণ্ডন করেন সু চি।
অভিযোগ রয়েছে যে মিয়ানমার ২০১৭ সালে জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যার জন্য ইচ্ছাকৃত অভিযান চালিয়ে ছিল এবং এ থেকে বাঁচতে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
সু চি বলেন, ‘সমন্বিত ও ব্যাপক সশস্ত্র হামলা থেকে অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাত সৃষ্টি হয়েছিল....এতে জবাব দেয় মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনী। দুঃখজনকভাবে, এ সশস্ত্র সংঘাতের ফলে কয়েক লাখ মুসলিমকে দেশত্যাগ করতে হয়।’
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে সু চি’র উপস্থিতি এক লক্ষণীয় ঘটনা। কারণ তিনি সেখানে সেই সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন যারা তাকে প্রায় ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দী করে রেখেছিল।
তিনি মিয়ানমারের তৎকালীন জান্তা সরকারের আমলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
বুধবার দ্য হেগের আদালতের বাইরে সু চি’র অল্প কিছু সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন।
সু চি আদালতে দাবি করেন যে ৫৭ দেশের সংগঠন ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষ থেকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে যা হয়েছিল তার ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ চিত্র তুলে ধরেছে।
গাম্বিয়ার অভিযোগ, মিয়ানমারে গণহত্যা চালানো হয়েছে এবং তা এখনো চলছে। তারা মিয়ানমারে গণহত্যার অপরাধ বাড়িয়ে দেয়া বা এতে ইন্ধন দেয়ার মতো সব কার্যক্রমসহ সহিংসতা বন্ধে নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দ্য হেগের বিশ্ব আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
কিন্তু সু চি বলেন, মিয়ানমারের অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল রাখাইনের ঘটনাপ্রবাহগুলো জটিল এবং তা পরিমাপ করা সহজ নয়। তিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন যে কীভাবে সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আফগান ও পাকিস্তানী চরমপন্থীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া বিদ্রোহীদের হামলার জবাব দিয়েছিল।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে আসা সু চি আদালতে দেয়া বক্তব্যে দাবি করেন যে তার দেশের সশস্ত্র বাহিনী ১২ জায়গায় লড়াইয়ের সময় প্রাসঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করেছে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে হয়তো অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে এবং একটি হেলিকপ্টার হয়তো ‘অ-যোদ্ধাদের’ মেরেছে। সু চি জানান, কী হয়েছিল তা মিয়ানমার তদন্ত করছে এবং তাদের এ কাজ শেষ করতে দেয়া উচিত।
‘যে রাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে তদন্ত, বিচার ও অপরাধে অভিযুক্ত সেনা ও অফিসারদের শাস্তি দেয় সেই রাষ্ট্রের কি গণহত্যার উদ্দেশ্য থাকতে পারে?’ আদালতে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সু চি এবং মিয়ানমারের আইনি দল যুক্তি দেখায় যে গণহত্যার ধারণাটি মিয়ানমারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তারা ১৯৯০ এর দশকে বলকান যুদ্ধের সময় ক্রোয়েশিয়ার উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে হাজারো মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং তখন একে গণহত্যা মনে করা হয়নি।
মঙ্গলবার গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবাকার মারি তামবাদো আদালতের কাছে আহ্বান জানান যাতে তারা মিয়ানমারকে বলে এসব অনর্থক হত্যাকাণ্ড, বিবেককে প্রচণ্ড ধাক্কা দেয়া বর্বর কর্মকাণ্ড ও নিজেদের লোকদের গণহত্যা বন্ধ করে।
এদিকে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের সন্দেহে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চার কর্মকর্তার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সার্বিক অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার মিন অং হ্লাইংয়ের প্রতি। সেই সাথে ডেপুটি কমান্ডার সোয়ে উইন এবং আরও দুই সেনা কর্মকর্তা তান উও ও অং অং এ নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মিন অং হ্লাইংয়ের কমান্ডে থাকা সেনাদের ব্যাপক হারে ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন সহিংসতা চালানোর বিশ্বাসযোগ্য দাবি রয়েছে।’
দ্য হেগের আদালতে শুনানি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলার কথা আছে।