ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে যেকোনো চুক্তিতে যেতে উভয় পক্ষকেই কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে ইঙ্গিত দিয়েছে ওয়াশিংটন। এতে করে এক অজানা ভয় জেঁকে বসেছে ইউক্রেনীয়দের মনে।
আগামী শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কা সম্মেলনে ইউক্রেন ভূখণ্ড নিয়ে সম্ভাব্য চুক্তির আলাপ কী পরিণতি নিয়ে আসবে, সেই শঙ্কায় দিন কাটছে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দাদের।
তেমনই একটি স্থান স্লোভিয়ানস্ক। ছোট্ট লবণাক্ত হ্রদের তীরে অবস্থিত এই শহরটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক অঞ্চলে অবস্থিত।
স্লোভিয়ানস্ক থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরেই রাশিয়া-ইউক্রেনের সম্মুখ যুদ্ধ চলছে। তা সত্ত্বেও এই জায়গাটুকু যুদ্ধের ভয়াহতা থেকে কিছুটা শান্তি এনে দেয়। তবে আলাস্কায় আদৌ কোনো চুক্তি হবে কিনা, হলেওে তার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান স্থানীয় বাসিন্দারা।
লবণাক্ত হ্রদে নামতে নামতে স্থানীয় সাংবাদিক মিখাইলো সিএনএনকে বলেন, ‘মনে হয় আমি যেন এই বাস্তবতা থেকে ভেসে দূরে চলে যাচ্ছি!’
তবে এই শান্ত সৈকতও তার মনে একটি আতঙ্ক জন্ম দিয়েছে। কারণ ডনবাসের যেসব এলাকা এখনো রাশিয়া নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি, সেসব এলাকার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ক্রেমলিন। এতে স্লোভিয়ানস্কসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা হুট করেই মস্কোর ভুখণ্ডে পরিণত হতে পারে।
মিখাইলো বলেন, ‘আমরা অনেক বন্ধুই এখানেই থাকতে চান, তবে আমাদের হয়তো এই জায়গাটি ছাড়তে হবে।’ তাই ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তড়িঘড়ি করে যে চুক্তি করতে চাইছেন ট্রাম্প, আপাত দৃষ্টিতে তা রাশিয়ার জন্য লাভজনক বলে মনে হলেও স্থানীয়দের মতামতের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যেতে পারে। এতে চুক্তিটির বাস্তবায়ন ব্যর্থ হতে পারে বলে মনে করেন মিখাইলো।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাম্প
ট্রাম্পের প্রতি হতাশা নিয়ে এই যুবক আরও বলেন, একের পর পর এক ইউক্রেনীয় যে প্রাণ হারাচ্ছেন তা নিয়ে ট্রাম্পের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। বরং তিনি কাঁদামাটি থেকে রুশ প্রেসিডেন্টকে টেনে তুলে বলছেন, ‘পুতিন আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমি তোমাকে পছন্দ করি।’
দুই বছর আগে ল্যান্ডমাইনে পা দেওয়ায় আহত ল্যুডমিলারের শারীরিক কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করে এই লবণাক্ত হ্রদ। তিনি বলেন, ‘তারা যে এসব কূটনীতির কথা বলে, সবই আসলে লোক দেখানো। তারা চিন্তা করে এক, বলে আরেক, আর করে অন্যকিছু। রাজনীতি সবসময়ই এমন।’
আলাস্কা সম্মেলনে দোনেৎস্ক অঞ্চল নিয়ে যে প্রস্তাব দেওয়া দেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যাখ্যান করেছে কিয়েভ। সেই সঙ্গে এই চুক্তির খবর যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জীবনকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।