বৃহস্পতিবার যৌথভাবে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আয়োজিত ভার্চুয়াল দাতা সম্মেলনে মানবিক সহায়তা হিসেবে এই অর্থ দেয়ার অঙ্গীকার করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।
২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর সহিংসতা শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এছাড়া আগে থেকে আশ্রয় নেয়া আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিয়ে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে কক্সবাজার।
২০১৭ সালের আগস্টে শুরু হওয়া ওই সহিংসতার পর থেকে এখন পর্যন্ত জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলে মোট প্রায় ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের
বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে পাওয়া ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির বাইরেই এই অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সহায়তায় ২০২০ সালের জন্য ১০০ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হলেও, তার অর্ধেক অর্থও না পাওয়ায় এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বাস্তুচ্যুতদের মিয়ানমার বা তাদের নিজস্ব পছন্দ মতো জায়গায় স্বেচ্ছা, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনই পূর্ণাঙ্গ সমাধান, যা রোহিঙ্গা জনগণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায়।
যৌথ সমাপনী ঘোষণায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সহায়তা বজায় রাখার বিষয়ে দাতা সম্মেলনের সহ-আয়োজকরা বৃহস্পতিবার রাতে জানান, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের জন্য মিয়ানমার সরকারকে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুততার মূল কারণগুলো খঁজে বের করে তা মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিবশে তৈরি করতে হবে।’
জেনেভা থেকে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মিয়ানমারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার প্রদান করতে হবে এবং দায়বদ্ধদের জবাবদিহিতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরতে হবে: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাল ঢাকা
আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার জন্য যারা তাত্ক্ষণিক ঘোষণা বা অর্থের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আশ্রয় না দিয়েও যারা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যদের অন্যভাবে সমর্থন করছেন এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ সম্মেলনে অংশ নেয়া সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন দাতা সম্মেলনের আয়োজকরা।
জেনেভার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অব্যাহত সমর্থন ও আশ্রয় দেয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়া দেশ এবং সংস্থা:
দাতা সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য সহ-আয়োজক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউএনএইচসিআর নিম্নলিখিত দেশ এবং সংস্থাগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, ব্রুনেই, কানাডা, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, কুয়েত, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, রোমানিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ভিয়েতনাম; এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশিয়া প্যাসিফিক রিফিউজি রাইটস নেটওয়ার্ক (এপিআরআরএন), ব্র্যাক, ইন্টারঅ্যাকশন, আইসিভিএ, আইসিআরসি, আইএফআরসি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন (ওএইচসিআর),এসসিএইচআর, ইউনিসেফ, ইউএনডিসিও, ইউএনডিপি, ইউএন উইমেন, ইউএনএফপিএ, ইউএনওএইচএ, ডব্লিউএফপি এবং বিশ্বব্যাংক এই দাতা সম্মেলনে যোগ দেয়।