গত শনিবার থেকে হঠাৎ করেই ভারত সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন করে ৪০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করে। এরফলে আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। পরে নতুন শুল্ক দেওয়া হলে আমদানি শুরু হয়।
তবে ভারতের এই নতুন শুল্ক আরোপের কারণে পেঁয়াজ আমদানি অনেকটা কমে গেছে। গত রবিবার বন্দরের মোকামে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায় পাইকারী বিক্রি হয়েছে। আজ সোমবার আমদানি করা পেঁয়াজের দর এখনো পাওয়া যায়নি।
এদিকে গত শনিবার ভারতের এই সিদ্ধান্তের খবরে বন্দরের মোকামে ও খুচরা বাজারে অন্তত কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে শুল্কমুক্তভাবে দেশে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এতদিন ভারত সরকারকে কোনো শুল্ক দিতে হয়নি। এখন পেঁয়াজ আমদানি করতে হলে ৪০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। ফলে প্রতি কেজিতে ১০ টাকার উপরে বাড়তি খরচ হবে। যার ফলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে বাংলাদেশি টাকায় ৫০ থেকে ৫৬ টাকা পড়বে। এ কারণে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরও বেশি হবে।
আরও পড়ুন: ভারতের শুল্ক আরোপ করায় খুলনার বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
তিনি আরও জানান, আমদানি করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্তের জন্য আমরা আজ সোমবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করিনি।
যেহেতু আগের এলসির পেঁয়াজ সীমান্তের ওপারে এসে আটকে ছিল। তাই ভারতের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন শুল্ক দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে। না হলে প্রচন্ড গরমে পেঁয়াজ নষ্ট হতে পারে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, এটা আমাদের জন্য সতর্ক বার্তা। এখন থেকে সরকারকে ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখতে হবে। সামনে আরও দাম বাড়বে। ভারত বরাবরই আমাদের সঙ্গে বাণিজ্যের নিয়ম ভঙ্গ করে।
তারা সবকিছুই হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা চাই ভারত সরকার এই শুল্ক প্রত্যাহার করে পেঁয়াজ রপ্তানি স্বাভাবিক রাখবে।
ভারতের হিলি বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানিকারক অরিন্দম জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক বাড়ানোর কথা ভাবছিল। যার ফলে শনিবার পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
যা গতকাল রবিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে ভারতে পেঁয়াজের দাম অনেক বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত
কারণ দীর্ঘ সময় ধরে অত্যধিক গরম থাকার কারণে পেঁয়াজের মান নষ্ট হওয়ায় ভালো মানের পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ফলে সরকার রপ্তানিতে শুল্ক বসিয়ে অভ্যন্তরীণ মজুদ স্বাভাবিক রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের বেসরকারী অপারেটর পানামা হিলি পোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মল্লিক জানান, গতকাল রবিবার ভারতীয় ৭টি ট্রাকে দুইশত এগার মেট্রিকটন এবং গতকাল সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সতেরটি ট্রাকে চারশত মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আগের চেয়ে এখন কম আমদানি হচ্ছে।
এদিকে শনিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি অমরিতা টিটুস -এর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ভারতে অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। প্রচন্ড গরমের কারণে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এটা বহাল থাকবে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার বেশি