চলতি বছরে ভারতে এক হাজার ৩৫২ টন ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকার মোট এক কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় করেছে বলে জানিয়েছন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার সমন্বিতভাবে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১২ বছরে দেশে ইলিশ আহরণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ৯০ শতাংশ।’
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২' বাস্তবায়ন উপলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
রেজাউল করিম বলেন, গত বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল হওয়ায় প্রায় ৫১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৩৯ হাজার ৩১৫ কোটি জাটকা ইলিশ সম্পদে যুক্ত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, প্রতিবছরের ন্যয় এ বছরও ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২'-এর আওতায় ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন উপকূলীয় ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রের অন্তর্গত ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাসহ দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ আইন কেউ অমান্য করলে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
শ ম রেজাউল বলেন, ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে বাধা প্রদান করলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে ইলিশ আহরণের চেষ্টা করলে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।
পড়ুন: শুক্রবার থেকে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা
তিনি বলেন, চলতি বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ হচ্ছে-৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ২০ জেলা যথা: চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার,বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, ঢাকা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলার নদ-নদী ও মোহনায় ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ আহরণ, পরিবহণ, ক্রয় বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় বন্ধ থাকবে এবং এসব জেলার বরফকলসমূহ বন্ধ থাকবে।
এ সময় অপর ১৮টি জেলা যথা গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, কুষ্টিয়া, নড়াইল এবং জামালপুর জেলায় শুধু ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, দেশের ৩৮ জেলার সকল নদ-নদী ও মোহনায় মা ইলিশ আহরণ বন্ধে দিনে ও রাতে অভিযান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং সারাদেশের মাছ ঘাট, মৎস্য আড়ৎ, হাট-বাজার, চেইনশপ ও অন্যান্য বিক্রয়কেন্দ্রে ইলিশ ক্রয় বিক্রয়, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় বন্ধে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হবে।
স্থানীয় জেলা-উপজেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ, নৌ-পুলিশ এবং মৎস্য অধিদপ্তর সম্মিলিতভাবে মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করবে বলে মন্ত্রী জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পড়ুন: ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট