বাংলাদেশে করোনা ও ডেঙ্গুর খবর নিয়ে ভারাক্রান্ত মিডিয়া কৃতজ্ঞতার স্মারক হিসেবে পরীমণিকে একটা অ্যাওয়ার্ড দিতে চায়, এরকম শোনা যাচ্ছে! এটি হয়তো গুজব। তবে এটি ঠিক যে তিনি না থাকলে মিডিয়া কী নিয়ে রিপোর্ট করতো? ধন্যবাদ পরীমণি আপা! কতগুলো লোকের চাকরি টিকলো। না হলে করোনার সংখ্যা রিপোর্ট করে আর কতদিন পাবলিক ভুলানো যায়!
সংখ্যা রিপোর্টিং কি?
করোনার অনেকগুলো উপসর্গের একটি এটি। প্রতিদিন কতজন শনাক্ত হলো, কতজন মারা গেলো এবং এটি সপ্তাহ, মাস , তিন মাস বা ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিনা। ব্যাস! রিপোর্টিং হয়ে গেলো, আর কিছু লাগে না।
আর যদি আরেকটু উন্নত রিপোর্ট করতে হয় তাহলে দুই এক্সপার্টকে ফোন দেয়া হবে। তারা একটা মতামত দেবেন এবং ওই সংখ্যা রিপোর্ট তখন হালাল রিপোর্ট হয়ে যাবে। ঘর থেকে নড়তেও হবে না।
শুধু বাংলাদেশের মিডিয়ার দোষ কী? গোটা সেক্টরেই চলছে এই সংকট। সাংবাদিকের চেয়ে পত্রিকার সংখ্যা বেশি হলে এটা হতে বাধ্য। যেন পত্রিকা বের করাটাই প্রধান কথা, কী লেখা বা বলা হচ্ছে, সেটা নয়।
লোকদের ইজ্জত রক্ষা অভিযান?
পরীমণিদের সম্পর্কে যে রিপোর্টগুলো হচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে যে ঢাকার বিত্তবান শ্রেণির সন্তানরা অনেকেই এই নারীকুলের বন্ধু-বান্ধব ছিল। তাদের বাসাতেই তারা আসতো, মদ-ইয়াবা সেবন করতো এবং তার ফলে ‘দুর্বল’মুহূর্তে কী সব হতো! যে দৃশ্য ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। তাই ধারণা করা যায় যে এটা বড়লোকদের ইজ্জত রক্ষা অভিযান। তবে এটা হতেই পারে। বাংলাদেশের ফিউচার এই সব তরুণদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ চিন্তিত তো হবেনই!
তবে একটি রিপোর্ট এসেছে যাতে বলা হচ্ছে কোন এক ব্যাংকের প্রধান ওই সব পার্টিতে গিয়ে ‘দুর্বল’ হয়ে যান এবং যথারীতি ছবিসহ দাবিনামা পান। তিনি অভিযোগ দেন এবং তারপরই সিদ্ধান্ত হয় অভিযান চালানোর। তারপরের ঘটনাপ্রবাহ আমরা সবাই জানি।
তাহলে সাংবাদিকের প্রয়োজন কী?
পরীমণির ওপর যত রিপোর্ট হয়েছে, সেটা মিডিয়ার কাটতি বাড়িয়েছে। হিট বাড়ছে মানে ভালো নিউজ পোর্টাল। সেটা না হয় হলো, কিন্তু ‘পরীমণিরা কত খারাপ’ সেটা প্রমাণ করাই যদি রিপোর্টগুলোর উদ্দেশ্য হয়, তাহলে বলব পাবলিক খায় নাই। বরং পাবলিক জানতে চায় যারা মনোরঞ্জিত হতে এই মেয়েদের কাছে যেতেন তারা কারা?
একটি পত্রিকায় ৮টি রিপোর্ট পাওয়া গেলো। মানুষ গিলছে কারণ তার মধ্যে আছে ‘যৌনতার সুড়সুড়ি’, নিষিদ্ধ জীবনের সংবাদ এবং নেশার মাল-মশলা। এতে কি খুব একটা খাটতে হচ্ছে? পুলিশ বা অন্য যারা, তারাই তো সব তথ্য দিচ্ছে, তাদের ভাষ্যই তো কোন রকম ক্রসচেক ছাড়াই গণমাধ্যমে দেদারছে প্রকাশ হচ্ছে। তাহলে সাংবাদিকের প্রয়োজন কী?
আমাকে আজ একজন ফোন করে জানতে চাইলো, ‘পরীমণি নিয়ে যা হচ্ছে সেটা সম্পর্কে আপনার কী মত?’ উত্তরটাই এখানে লিখলাম। তাই বলছি পরীমণিকে একটা মেডেল দেয়া উচিত, আমাদের সাংবাদিকদের কাজটা আরও অনেক সহজ করে দেয়ার জন্য। মাঠে যাবার কী দরকার, যখন সব খবর বাসায় আসে!
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি