বাংলাদেশের দলের পেসার মুস্তাফিজ জানিয়েছেন যে ‘লাল বল’ ক্রিকেটের ব্যাপারে তার প্রশ্ন আছে। তিনি মনে করে যে কেবল এক ফরম্যাটে বেশি খেললে তার বা খেলোয়াড়ের ক্রিকেট জীবন সীমিত হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানিয়েছে, এ নিয়ে তারা মুস্তাফিজের সাথে কথা বলতে চায়। বর্তমানে মুস্তাফিজ দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলছেন। ২০২১ সালে বিসিবি যখন বিভিন্ন ফরম্যাট ভিত্তিক চুক্তি করে প্লেয়ারদের সাথে তখন মুস্তাফিজ টেস্ট ক্রিকেট চুক্তি সই করতে রাজি হয়নি।
২
মুস্তাফিজ বলেছেন, ‘খেলার দুনিয়ায় টিকে থাকতে হলে শরীর ধরে রাখতে হবে। আর সেটা করতে কোন ফরম্যাটে কে কত সফল সেটা দেখতে হবে। রেকর্ড অনুযায়ী আমি টি-টোয়েন্টি ও ওডিআই খেলায় বেশি সফল। তাই ক্রিকেটে টিকে থাকতে আমাকে সঠিকভাবে দেখতে হবে। সারা বিশ্বে অনেকেই এখন এইভাবে নির্বাচন করে নিচ্ছে কোন ফরম্যাটে তাদের পোষায়, ক্রিকেট জীবন দীর্ঘায়িত করতে।’
পড়ুন: খালেদকে জরিমানা করল আইসিসি
৩
তিনি বলেন, এটা ঠিক না যে আমি খেললেই দল শক্তিশালী হবে কারণ চাপের কারণে খেলায প্রভাব পড়ে এবং খেলা খারাপ হয়। বরং সাদা ও লাল বলের জন্য আলাদা আলাদা বোলিং স্কোয়াড থাকা উচিত যাতে সব ফরম্যাটের খেলায় দল শক্তিশালী হয়। এতে সাফল্যের সম্ভাবনবা বেশি।
৪
২০১৫ সালে খেলার শুরুর পর মুস্তাফিজ ১৪টি টেস্ট খেলেছেন, যেখানে বাংলাদেশ এই সময়ে ৩৯ টেস্ট খেলেছে। তার অনুরোধের কারণেই তাকে টেস্ট দলের বাইরে রাখা হয় অতএব তার আগ্রহের অভাব বোঝাই যাচ্ছে। অনেকে অবশ্য তার টেস্ট খেলতে অপারগতার বিষয় নিয়ে ‘দেশ প্রেম’ প্রসঙ্গ আনেন কিন্তু এই যুক্তি খাটে না। ফিজ তো দেশের হয় খেলতে চান, শুধু টেস্ট খেলায় আগ্রহ কম।
পড়ুন: ক্যানসারের কাছে হার মানলেন ক্রিকেটার মোশাররফ
৫
গত ১০ বছরে ক্রিকেট দুনিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন এসেছে বাণিজ্যকরণের কারণে। আজকের পেশাদারিত্বের পেছনে রয়েছে এর বাণিজ্যি সাফল্যIতাই খেলোয়াড়দের যেমন মান বেড়েছে, দর্শকদের আগ্রহ বেড়েছে তেমনি। টি-টোয়েন্টি হয়ে উঠেছে সবচেয়ে পেশাদার ও জনপ্রিয়প ফরম্যাটে। সারা পৃথিবীতে লিগ ফুটবল যেমন জনপ্রিয় তেমনি হচ্ছে ফ্রাঞ্চাইজি আর প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট। ক্রমেই টেস্টে আগ্রহ হারাচ্ছে দর্শকরা যদিও এখনো এটাকে ফরম্যাটের মধ্যে ব্রাহ্মণ ভাবা হয়। অনেকের কাছে এটাই হলো কোন দেশের শ্ৰেষ্ঠত্ব মাপার নিরিখ। কিন্তু পাবলিকের আগ্রহ লাল বল ক্রিকেট। আজকের দুনিয়ায় পাঁচ দিন ধরে কারও পক্ষেই খেলা দেখা সম্ভব কি না সেটা সবার ভাবা দরকার।
৬
মুস্তাফিজের মতো আরও বহু ক্রিকেট খেলোয়াড় এই রকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কারণ এটা তাদের ও পাবলিকের পছন্দ। পাঁচ দিন খেলায় দেহের ওপর ঝড় বয়ে যায়। আগে খেলা হতো অনেক কম যে কারেণে ক্রিকেটারদের ততোটা বিশ্রামের প্রয়োজন হতো না। এখন এই বাস্তবতা পাল্টেছে। সারাক্ষণ কোনো না কোনো জায়গায় ক্রিকেট চলছে। মুস্তাফিজের এই টেস্টের প্রতি কম আগ্রহ আর কর্তাদের চাপ তার ওপর প্রমাণ করে ক্রিকেট দুনিয়া আগের মতো নেই। অনেক কারণ মিলে তৈরি হয়েছে ক্রিকেটের নতুন দুনিয়া যাতে টেস্ট নয় টি-টোয়েন্টি ও ওডিআই প্রাধান্য বিস্তার করছে।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
পড়ুন: সমালোচনার মাঝে ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়লেন রুট