কিছু দিন আগেও হেলেনা জাহাঙ্গীর নামটা কেউ কেউ জানতেন, আজ সবাই জানেন। তার বাসায় র্যাব তল্লাশি করেছে, কী সব পেয়েছে - মদ, হরিণের চামড়া, জুয়ার সামগ্রী ইত্যাদি। এরপর তার পরিচালিত জয়যাত্রা টিভি অফিসে অভিযান চালানো হয়, বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায় বলছে র্যাব। এটির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই বলে তারা জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল’ করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি রিমান্ডে আছেন, মামলা হয়ে গেছে, আগামী কয়েক মাস তার জেলে থাকার আশঙ্কাই বেশি। অথচ ক’দিন আগেও আওয়ামী লীগ নেত্রী/কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এখন তিনি একজন গ্রেপ্তার হওয়া অপরাধী।
পাবলিক কী ভাবছে?
পাবলিক কিছু ভাবছে না, তারা মজা পাচ্ছে কারণ তাদের ভাবাভাবিতে কিছু এসে যায় না। তিনি সরকারি দলের লোক, এটাই সবাই জানে, তাই তার পরিণতিতে অনেকেই আশ্চর্য। তাদের ধারণা, তিনি এমন কোনো বড় নেতা বা বড়লোক নন যে তার গ্রেপ্তার বা বাড়িতে অভিযান জাতীয় নিউজ হতে হবে। তাই সবার ধারণা, তিনি হয়তো বড় কাউকে খেপিয়েছেন, যার মাশুল দিতে হচ্ছে। সবার হয়তো মনে আছে তিনি তারকা পরিমনির বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলেছিলেন সেই ঘটনার সময়। তখন তিনি বোট ক্লাবের মেম্বার ছিলেন। ওপর তলার বাসিন্দা। আজ তিনি জেলে, প্রায় মুরুব্বীহীন।
আঙ্গুলটা তাই তার জয়যাত্রা টিভির দিকে। র্যাব ইঙ্গিত করেছে যে ওই টিভি ব্ল্যাকমেইলিং করতো এবং এখানেই আসল বিপদ। এর আগেও জনৈক হোটেলবাসিনী ব্ল্যাকমেইলিং ব্যবসা করতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন, সহজে বের হবেন বলে মনে হচ্ছে না। তার সহযোগীরাও যথেষ্ট ‘রাষ্ট্রীয় খাতির’ উপভোগ করেছেন। অতএব বোঝা দরকার, খুচরা পয়সা বাজে বেশি, কিন্তু শেষ কথা বলে হাজার টাকার নোট।
সেটা কি তার চাকরি বাকরি লীগ?
মনে হচ্ছে কথায় কথায় এই লীগ ওই লীগ করা কিছুটা কমবে এবার। তবে যে কারণে এগুলা হয় তার কারণ হচ্ছে লীগ ব্যবহার করে সুবিধা গ্রহণ, চাঁদাবাজি বা অন্য কিছু করা সহজ। সরকারি দলের ভাবমূর্তি এতে ক্ষুণ্ণ হয়। আর বিরোধী দল তো মাঠেই নেই , কেউ তাদের সিরিয়াসলিও নেয় না। সেফুদার সঙ্গে হেলেনার যোগাযোগটাও একটু হাস্যকর, কারণ তিনি একজন হাসির পাত্র, কেউ সিরিয়াসলি নেয় না।
তাহলে যে শিক্ষাটা পাওয়া গেলো তা হচ্ছে সুবিধার জন্য কে কী করতে পারবেন তার একটা সীমারেখা আছে, সেটা দল করেন আর নাই করেন। যারা এই লাইনের তারা জেনে নিন। কী ও কেন করবেন সেটা আপনাদের বিষয়। আমরা শাহেদ, সম্রাট, সাবরিনা ও অন্য নাম দেখে এটা বুঝি।
মিডিয়ার কালো ব্যবসা যারা করেন তারা সাবধান। আপনারা আজ সুখে আছেন কিন্তু কার গায়ে যে কখন হাত পড়ে এটা বুঝে করেন। ক্ষমতাধররা যখন ক্ষেপে যায় তখন কী হয় তার প্রমাণ দেখেন। উপরে উঠতে চাওয়া ভালো কিন্তু রাস্তা চেনা থাকা দরকার।
ঢাকার যত ক্লাব আছে - যার অনেকগুলোর মেম্বার হেলেনা। এতে এটা প্রমাণ হয় যে সব কিছু হচ্ছে যোগাযোগের তেজারতি। যতদিন এটা থাকবে, ততদিন এদের দেখতে হবে। কেউ ভালো চলছে, কেউ হোঁচট খাচ্ছে। পায়ের নিচে এই ওপরতলার কোনো মাটি নাই।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীর তিন দিনের রিমান্ডে
আ’লীগ নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীর আটক