বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রবিবার নিশ্চিত করেছেন যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে তাদের দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, আমরা নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে কম চিন্তা করছি। আমাদের প্রধান উদ্বেগ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, এটা নিশ্চিত। কারণ তারা (আ.লীগ) আবার তাদের নিজস্ব স্টাইলে নির্বাচনী ফলাফল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে এবং আমাদের ঘরে বসেই দেখতে হবে। তাই আমরা এ ধরনের নির্বাচনে যোগ দেব না।’
রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ সব কথা বলেন। কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালামের কথিত সাম্প্রদায়িক মন্তব্য এবং বিএনপি নেতা নিপুণ রায় চৌধুরীর ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য ফ্রন্ট এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, বিএনপির একমাত্র দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। আমাদের দাবি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সার্চ কমিটি গঠন নয়। নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দলীয় সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করবে।
আরও পড়ুন: বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে: আশা সিইসির
এর আগে শনিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান (অব.), সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, সাবেক জ্যৈষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক জ্যৈষ্ঠ সচিব আনিছুর রহমানকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন।
সংবিধানের সঙ্গে মিল রেখে প্রথমবারের মতো কোনো আইনের অধীনে সদ্য গঠিত এ নির্বাচন কমিশন সোমবার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে এর আগের নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়।
কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে অবসরে যান।
এর আগের দুই নির্বাচন কমিশনের মতো নতুন কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত হয়।
আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি সিইসি ও ইসি নিয়োগের জন্য ১০ জনের নাম প্রস্তাব করেন। সার্চ কমিটি প্রতি পদে দুজনের নাম প্রস্তাব করে।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ১০ নামের তালিকা গ্রহণ করেন।
এর আগে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নাম চায় সার্চ কমিটি। কিন্তু বিএনপি ও অন্য কয়েকটি দল কোনো নাম দেয়নি।
এছাড়া এ বিষয়ে সার্চ কমিটি বিশিষ্ট নাগরিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক করে।
কাজী হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বে সদ্য গঠিত নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের চ্যালেঞ্জের সামনে পড়বে। নির্বাচনটি ২০২৩ সালের শেষের দিকে কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: নতুন ইসি কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না: বিএনপি
বর্তমান সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি শেষ হবে। তবে সাধারণ নির্বাচন সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে আয়োজন করতে হয়।
ফখরুল অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো ইসিকেও ধ্বংস করেছে। নির্বাচন কমিশন, একটি সাংবিধানিক সংস্থা, দেশের জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত করার একটি পবিত্র দায়িত্ব ইসির রয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি সংসদ ও সরকার গঠনে সহায়তা করাও ইসির দায়িত্ব। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: সার্চ কমিটি ‘নাটকের’ অংশ: বিএনপি