প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চলমান আন্তর্জাতিক সংকটের মধ্যেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সফলভাবে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করেছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক সংকটের মধ্যেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রয়েছে।’
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতয়ি সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের (নওগাঁ-২) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এর আগে দিনের কার্যক্রমের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব উপস্থাপন করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এরই মধ্যে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ‘সরকার আমাদের (খাদ্য) স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রাখার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে সংকট তৈরি হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই পরিস্থিতিতে সরকার এই সংকট মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়মিত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ, ক্রমাগত উপকরণ সহায়তা ও কৃষি খাতে নীতি সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সফলভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: দেশকে দুর্ভিক্ষমুক্ত রাখতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব মঞ্চে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩২৮.৯৬ লাখ টন, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে ৪৭৭.৬৮ লাখ টন হয়েছে।
১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের (লক্ষ্মীপুর-১) অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশ তাদের নিজ নিজ দেশে সংঘটিত গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। পরে ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আলোচনার মাধ্যমে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়।
তিনি বলেন, যেহেতু ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে, তাই একই ইস্যুতে আরেকটি আন্তর্জাতিক দিবস পালনের প্রস্তাব যৌক্তিক হবে না।
তিনি বলেন, তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও শহীদ পরিবারের কয়েকজন সদস্য ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংসদ নেতা বলেন, গণহত্যা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিশ্বের অন্যান্য গণহত্যার মতোই জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
আরও পড়ুন: যেকোনো সংকট এড়াতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তবে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরি করে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া সহজ হবে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
৮৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনের, ২০০৯ সাল থেকে ১১৩১টি সেতু নির্মিত: প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদের (ঠাকুরগাঁও-৩) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বর্তমান সরকার তিন মেয়াদে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ৪৩১টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৮৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক চার-লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া একই সময় ১১ হাজার ৪৩৪ কিলোমিটার মহাসড়ক তৈরি করা হয়েছে এবং ১ হাজার ১৩১টি সেতু (১২৩,২৫৪ মিটার) নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থ বছরে প্রায় ৫৭৪ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৪-লেনে উন্নীতকরণ, ৪৬৩৪ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ১৩১টি প্রকল্পের অধীনে ৭৫০টি সেতু (৬৪,৮৪৪ মিটার) নির্মাণের কাজ চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে সম্পন্ন হওয়া মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ককে ৪-লেনে উন্নীতকরণ (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম সেকশন) প্রকল্প, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, জয়দেবপুর-চন্দ্রা। টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক প্রকল্পের উভয় পাশে সার্ভিস লেন; ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা-মাওয়া অংশ (ইকুরিয়া-বাবুবাজার সংযোগ সড়ক সহ)।
তিনি বলেন, সরকারের তিন মেয়াদে নির্মিত সেতুগুলোর মধ্যে রয়েছে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের পায়রা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, মেঘনা সেতু, গোমতী সেতু, পায়রা সেতু (লেবুখালী সেতু) এবং আন্তঃসীমান্ত সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের (বাংলাদেশ) আওতায় মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত মধুমতি সেতু।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ বেড়েছে ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার:
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরনের (নোয়াখালী-৩) এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ এখন ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ডিসিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
এ ছাড়াও, ৪১টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে এবং ৫০টি শিল্প বিভিন্ন অঞ্চলে নির্মাণাধীন রয়েছে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি এই শিল্পগুলো ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য উৎপাদন করেছে এবং ২৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সঙ্গে এই শিল্পগুলো ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।