বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচিত হলে জনগণকে উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আসুন, আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আপনারা আমাদের ভোট দিন; আমরা আপনাদের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দেব।’
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে 'স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান' স্লোগান নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
নির্বাচনী ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট দেশে পরিণত করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে ঘুষ ও দুর্নীতি নির্মূল, সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্য বীমা প্রবর্তনসহ বিভিন্ন খাতে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা জোরদার করার বিষয়ও ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যোগ দিতে যাচ্ছে। এই রূপান্তর একদিকে যেমন সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জের।
আরও পড়ুন: সকালে ভোটকেন্দ্রে যাবেন, নৌকায় ভোট দেবেন: তারাগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের অবশ্যই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা থাকতে হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাহক আওয়ামী লীগের মাধ্যমে ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। আজকের বাংলাদেশ কোনোভাবেই দারিদ্র্যপীড়িত বা অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর নয়। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, আজকের বাংলাদেশ 'পরিবর্তিত বাংলাদেশ'। বাংলাদেশ এখন একটি দ্রুতগতির দেশ যা তার সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ছোটখাটো ব্যর্থতা আজ আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতীতের ধারাবাহিকতায় এবার আওয়ামী লীগ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাস্তবায়নযোগ্য নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করেছে। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনার ধারাবাহিকতা দ্বাদশ নির্বাচনী ইশতেহারেও বজায় রাখা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বিভিন্ন খাত নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহারের কয়েকটি বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে রংপুরে প্রধানমন্ত্রী
যেসব বিষয় ইশতেহারে গুরুত্ব পেয়েছে:
- ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর
- সুশাসন
- জনকল্যাণমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন
- জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা
- দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি
- গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এমন দাবি করবেন না যে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা সত্ত্বেও তারা সবসময় সরকার পরিচালনায় শতভাগ সফল।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা যা বলি তাই করি। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন তারই প্রমাণ।’
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো বেশি দামে পণ্য আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশীয় মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়নের ফলে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পণ্যের দাম এবং মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। বহুবার বহুমুখী ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে পারিনি। এই সমস্যা শুধু আমাদের দেশের জন্য নয়, এই সমস্যা ধনী-দরিদ্র সব দেশের জন্যও।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা লাঘব করার চেষ্টা করছে। আশা করি খুব শিগগিরই আমরা এই বাধা অতিক্রম করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।’
ইশতেহার উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলটির নির্বাচনী ইশতেহার কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারের প্রত্যাশায় উৎসবমুখর রংপুর