করোনায় আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী।
মৃত্যুর প্রায় তিন মাস পর মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর জানান তার চাচাতো ভাই ও সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
আশিক চৌধুরী জানান, হারিছ চৌধুরী গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি লন্ডনে করোনায় আক্রান্ত হন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় ফেরেন। কয়েকদিন পর তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভও আসে।
করোনার ধকল সাময়িকভাবে কাটিয়ে উঠলেও তার ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হারিছ চৌধুরী।
আরও পড়ুন: বিএনপির সমাবেশ বন্ধ করতে নতুন বিধিনিষেধ: রিজভী
হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ তার মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ফোনে দেশে জানিয়েছেন বলে জানান আশিক চৌধুরী।
আশিক চৌধুরী জানান, লন্ডনে দাফন করা হয়েছে হারিছ চৌধুরীকে। তবে লন্ডনের কোন এলাকায় তিনি মারা গেছেন-তা তার জানা নেই বলে জানান আশিক চৌধুরী।
উল্লেখ্য, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। সে সময়ের প্রভাবশালী এই নেতা, বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সে সময় তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর।
১১ জানুয়ারী মঙ্গলবার আশিক চৌধুরী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন- ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’। নিজের ছবির সঙ্গে হারিছ চৌধুরীর একটি ছবি যুক্ত করে তিনি এই স্ট্যাটাস দেন। এরপর স্ট্যাটাসের নিচে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন লিখে কমেন্ট করতে থাকেন। অনেকে হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে আফসোসও করেন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি-ছাত্রলীগের সমাবেশ, ১৪৪ ধারা জারি
জানা গেছে, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে থাকতেন। তার ছেলে জনি চৌধুরী পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার। আর মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ব্যারিস্টার। আগে থেকেই হারিছ চৌধুরী ব্ল্যাড ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে একবার রক্ত পরিবর্তন করে আসেন। দেশ ছাড়ার পর তিনি যুক্তরাজ্যে আরেকবার রক্ত পরিবর্তন করেন বলে জানা গেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আক্রান্ত হওয়ার আগে হারিছ চৌধুরী করোনার দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। এরপরও তিনি আক্রান্ত হন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তার শরীরের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং পুরো ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে পড়ে। ফলে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও তিনি ফুসফুস জটিলতায় ভূগছিলেন।
জানা যায়, ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির সপ্তাহখানেক পর স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে বেড়াতে আসেন হারিছ চৌধুরী। ওই রাতেই যৌথবাহিনী তার বাড়িতে অভিযান চালায়, তবে তাকে পায়নি। এরপর কয়েক দিন সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান বিএনপি সরকারের দাপুটে এই নীতিনির্ধারক।
আরও পড়ুন: বৃহত্তর ঐক্য গড়তে সরকারবিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা বিএনপির
এরপর তিনি ওঠেন নানার বাড়ি ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে। এরপর পাকিস্তান হয়ে ইরানে তার ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর কাছে পৌঁছান এমন খবরও চাউর হয়। ইরান থেকে কয়েক বছর আগে তিনি যুক্তরাজ্যে পরিবারের কাছে যান। সেখান থেকে ভারতে যাতায়াত করতেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করতেন বলে একাধিক সূত্র বিভিন্ন সময় নিশ্চিত করেছে।
প্রসঙ্গত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীর সাত বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হারিছ চৌধুরী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।