তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্বাচন যে কেউ বর্জন করতে পারে, তবে নির্বাচন প্রতিহত করার অধিকার কারো নেই। কেউ যদি নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় তবে সেটি নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার সামিল হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে অত্যন্ত সুন্দর নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনের পরিবেশ কেউ এখন নষ্ট করছে কি না; সেটি দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন: তথ্য সংগ্রহ আর চুরি এক জিনিস নয়: হাছান মাহমুদ
সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) নবনির্বাচিত কমিটির সৌজন্য সাক্ষাৎ ও পরিচিতি সভা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করে বিরোধীদল দমনের চেষ্টা করছে এবং জনগণের অধিকার হরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, মির্জা ফখরুলকে অনুরোধ জানাব, পেছনে ফিরে তাকানোর জন্য।
তিনি বলেন, তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন ৫০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন। এখন বাংলাদেশে ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। গ্রামের গৃহবধূ, স্কুলের শিক্ষার্থী, রিকশাওয়ালা, খেতে কাজ করা ব্যক্তিও এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, এই ইন্টারনেটকে সর্বজনীন করেছে বর্তমান সরকার।
মন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে আমাদের স্লোগানই ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ। কারণ, ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম লক্ষ্য ছিল, সবার কাছে ইন্টারনেট সহজলভ্য করা। গ্রামে গ্রামে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া।
এ ছাড়া গ্রামে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করে এমন অনেক যুবক আছেন।
তিনি বলেন, আমরা কোনোভাবে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করি না বরং সহজলভ্যতার সুযোগ গ্রহণ করে বিএনপি তাদের পেইড এজেন্ডা দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী থেকে শুরু হরে সরকারদলীয় নেতাদের চরিত্র হনন করছে।
তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে তাদের অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। যারা বিভিন্ন দেশে বসে সরকারের বিরুদ্ধে, সরকারি দলের নেতাদের চরিত্র হনন করে, তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে তারেক রহমান।
সেই বৈঠকের ছবিও আমাদের কাছে আছে। এটা কেবল ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার কারণে করতে পারছে; যা কখনো সমীচীন না। এগুলো ডিজিটাল অপরাধ। ডিজিটাল অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সারা পৃথিবীতে আইন আছে।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি একটি আইন পাস করেছে। সেখানে অনেক দেশ সায় দিয়ে আইন পাস করেছে। আমরা এখনো করিনি। তাদের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় খুবই আন্তরিক: সংসদে হাছান মাহমুদ
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, মির্জা ফখরুল ডিজিটাল অপরাধীদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য কাল সংবাদ সম্মেলন করছেন। কিন্তু তার উচিত সরকারকে ধন্যবাদ জানানো।
কারণ, তিনি ভিডিও কনফারেন্সে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মিটিং করেন, সেটা শেখ হাসিনার জন্য হয়েছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানানো দরকার।
বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, তারা বর্তমান সরকারের অধিনে নির্বাচনে যাবে না, আর সরকার বাহিনী দিয়ে বিএনপির নেতাদের নামে হামলা-মামলা করছে, এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা চাই, বিএনপি পূর্ণশক্তি নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের মতো নয় বরং পূর্ণশক্তি নিয়ে অংশ নিক।
একদিকে তারা বলছেন, নির্বাচনে যাবেন না, আবার বলছেন আমাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে চাচ্ছে। আমরা কাউকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে চাচ্ছি না। আমরা চাই, বিএনপি নির্বাচনে আসুক এবং সংবিধান মেনে যে নির্বাচন হবে সেখানে অংশ নিক।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের মধ্যেই স্পষ্ট, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান। কিন্ত কোনো অদৃশ্য শক্তির কারণে নির্বাচনে আসতে পারছেন না। কোনো অদৃশ্য শক্তির কারণে নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না তাদের নেতৃত্ব। এটি মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে স্পষ্ট। আমি তাদের অনুরোধ জানাই, অদৃশ্য থাবা থেকে মুক্ত হয়ে বিএনপি দলটাকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও একটি পর্যবেক্ষক দল আগামী ২৮ জুলাই ঢাকায় আসবে। তারা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও দেবে, এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিনিধি দল আসতেই পারে, এলে তো ভালো। বাংলাদেশের নির্বাচন কেমন হবে; সেটা দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমরাও চাই তারা আসুক, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন কত সুষ্ঠু হয়েছে। একটা ঘুষিকে সামনে এনে গণমাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পশ্চিম বাংলায় যেখানে ৩৯ জন মারা গেছেন, সেখানে এখানে একটা ঘুষি মারা হয়েছে। তাহলে পরিবেশ কোথায় ভালো?
হাছান মাহমুদ বলেন, ঢাকা ১৭ এর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কেন্দ্রের বাইরে একজন প্রার্থীকে হেনস্তা করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। আমরা সেটার নিন্দাও জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সেখানে ৮ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জামায়াতকে দিয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার বিষয়ে বলিয়েছে বিএনপি: হাছান মাহমুদ