প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণার সময় শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কোনো সংঘাতে জড়ালে তার নিজের দলের সদস্যদেরও রেহাই দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না। কোনো সংঘাতের ক্ষেত্রে, এমনকি আমার দলের কর্মীরাও এমন কিছুতে জড়িত থাকলে তাদেরও রেহাই দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। এটা মনে রাখবেন।’
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নাটোর, পাবনা ও খাগড়াছড়ি- পাঁচটি জেলায় সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোট দেবে কারণ এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। তারা যাতে যাকে খুশি তাকে বেছে নিতে এবং ভোট দিতে পারে। যারা তাদের (জনগণের) ভোট পাবে, সেউ বিজয়ী হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যে উন্নয়ন করেছে তা ভেস্তে যাবে।
আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এখানে 'নৌকা' প্রতীকের প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ও অন্যান্য দলের প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। সবাইকে জনগণের কাছে যেতে হবে। যেসব প্রার্থী ভোট পাবেন তারাই নির্বাচিত হবেন।’
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে তার দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’র পক্ষে ভোট চেয়ে বলেন, এই প্রতীকে ভোট দিয়ে মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। এখন জনগণ অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছে এবং নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে সিলেটে মাজার জিয়ারত করলেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আওয়ামী লীগকেই সরকার গঠন করে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সব প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে বলেছেন, যাতে কেউ ভোট নিয়ে কোনো অভিযোগ তুলতে না পারে এবং ভোটকেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক ভোটার উপস্থিত হন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জনগণ ও ভোটারদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কোনো দল নির্বাচনে যোগ দিলো বা যোগ দিলো না তাতে কিছু যায় আসে না। বিএনপি একটি কারণে নির্বাচনে অংশ নেয় না, কারণ এখানে ভোট কারচুপির সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, যেহেতু ২০০৮ সালে বিএনপি তা করতে পারবে না (ভোট কারচুপি), তাই তারা সব সময়ই নির্বাচন বানচাল ও বয়কট করতে চায়। এটা তাদের ইচ্ছা এবং এটা নিজ নিজ দলের বিষয়।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে অংশ নিন। সবাইকে (প্রার্থী) অবাধে প্রচারণা চালাতে হবে এবং জনগণকে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে এবং বাছাই করতে দিতে হবে। তাহলেই আমাদের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, জনগণ ১৯৯৬ সালে বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়াকে ভোট কারচুপির অভিযোগে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে এবং তারপর ২০০৬ সালে ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্ত করে আবারও ভোট চুরির চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা এখন তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু ভোটের কথা শুনতে পাচ্ছি, যারা ভোট কারচুপির অভিযোগে দুই দফায় বহিষ্কৃত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগই এটা (সুষ্ঠু নির্বাচন) করেছে। জনগণকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে আপনাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে কেউ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের আশ্রয় নিয়ে জনগণের ক্ষতি করতে না পারে। আমি সবাইকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাতে চাই।’
আরও পড়ুন: অগ্নিসংযোগ করে বিএনপি মানুষের মন জয় করতে পারবে না: শেখ হাসিনা
অগ্নিসংযোগ ও নাশকতাকারীদের রাজনীতি করার অধিকার নেই: প্রধানমন্ত্রী