দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বৃহস্পতিবারের ভাষণে নির্জলা মিথ্যাচার করেছেন। তার এই বিভ্রান্তিকর ও দুরভিসন্ধিমূলক ভাষণ অন্তঃসারশূন্য কথামালার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই নয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশের তথাকথিত উন্নয়ন, মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, স্বাস্থ্য খাতের ইতিবাচক পরিবর্তন, আইনের শাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানসহ যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা মিথ্যাচারের কালো দলিল। দেশবাসী তার এই ভাষণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
আরও পড়ুন: ২০২০: রাজনীতির মাঠে সাফল্যহীন বিএনপি
জাতির উদ্দেশে বৃহস্পতিবার ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিশাল জয় নিয়ে পরের বছরের ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে।
রিজভী বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র হত্যা, ভোটাধিকার হরণ, খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, টাকা পাচার, দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও দুর্বৃত্তায়ন এবং দুঃশাসনের এক যুগ পার করল বাংলাদেশ। বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে ক্ষমতাসীন দুষ্টচক্র মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য-মানবাধিকার-ন্যায়বিচারকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে জনগণকে বোকা বানাতে তথাকথিত উন্নয়নের শ্লোগান তুলেছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ২০২১ সালে ‘স্বৈরাচার’ থেকে মুক্তি পাবে: বিএনপি
বিএনপির এ নেতা বলেন, উন্নয়নের নামে ক্ষমতাসীন দুষ্টচক্রের গত এক যুগের এই দুঃশাসনের সঙ্গে একমাত্র বিতাড়িত তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের কথিত উন্নয়নের এক দশকের তুলনা চলে। গণতন্ত্র হত্যা করে, মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৮ সালে তথাকথিত উন্নয়নের এক দশক উদযাপন করেছিলেন আইয়ুব খান। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার হরণ করে আইয়ুব খানের কথিত উন্নয়ন জনগণ মেনে নেয়নি। জনগণকে বোকা বানানো যায়নি। বরং ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুথানে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের নির্মম পতন ঘটে।
‘এখনও যারা গণতন্ত্র হরণ করে, মানুষের বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে কথিত উন্নয়নের এক যুগ পূর্তি করতে চান, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সে দিন আর বেশি দূরে নয়, স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মতো তাদেরও পতন হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র,’ বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: কর্মসূচি ডেকে বিএনপি নেতারা বাসায় বসে হিন্দি সিনেমা দেখে: ওবায়দুল কাদের
তিনি দাবি করেন, গত এক যুগে দেশ থেকে নয় লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেয়া হয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড থেকে লোপাট করা হয়েছে ৮১০ কোটি টাকা। হলমার্ক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে জনগণের ৩৬০০ কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলেছে অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
রিজভী বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট, নাৎসিদের থেকে আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান এই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনাসহ প্রতিটি গণতন্ত্রবিরোধী কর্তৃত্ববাদী সরকারের কাছে জনগণকে বোকা বানিয়ে শোষণের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ঝুড়ি ঝুড়ি উন্নয়ন ও জিডিপির উদ্ভট গল্প। বিশ্বের দেশে দেশে স্বৈরাচারী শাসকদের মতো বাংলাদেশেও গণতন্ত্র হত্যা করে চালু করা হয়েছে তথাকথিত উন্নয়নের আষাঢ়ে কাহিনি। তিনি জনগণের মুখোমুখি হতে চান না।’
আরও পড়ুন: বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে: সেতুমন্ত্রী
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের এক যুগ পূর্তি নিয়ে মাতামাতি করছে সরকার আর তাদের অনুগত ব্যক্তিরা। স্বৈরশাসনে নিষ্ঠুর দমনে দৃশ্যত স্থিতিশীল পরিবেশ থাকলে সুমধুর উন্নয়নের গালগল্প ও দুর্নীতি-লোপাট চলে সমানতালে। এক যুগে উন্নয়নের চেয়ে লুটপাট হয়েছে বহুগুণ। মেগা প্রকল্পের কয়েকটি কুমির ছানা যুগব্যাপী দেখিয়ে আর ক্ষমতার নিয়ামক শক্তিগুলোকে অবাধ সুযোগ সুবিধায় তুষ্ট করে তিনটি ভুয়া জাতীয় নির্বাচন পার করার মধ্যে তারা তাদের সাফল্য খুঁজছে।’
তাদের এক যুগের সফলতা হলো- দেশের মানুষ এখন মৃত্যু আতঙ্কে ভুগছে এবং জীবিকার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে, বলেন রিজভী।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা রিজভীর অ্যানজিওপ্লাস্টি সম্পন্ন
তিনি বলেন, করোনা টিকা নিয়েও আওয়ামী সরকারের মাস্টারপ্ল্যান জনগণের কাছে পানির মতো পরিষ্কার। গতকালও প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা বলেছেন করোনা টিকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। ভারতই নাকি টিকা রপ্তানি করবে। কিন্তু গতকালই ভারতীয় হাইকমিশনার বলেছেন বাংলাদেশে কবে টিকা আসবে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘টিকা বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের তৈরি মিথ্যাচার প্রকাশ পেয়েছে। তারা (সরকার) যা বলছে এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং মিথ্যা। মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করার আওয়ামী লীগের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য রয়েছে।’