বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুককে বিএনপি বলেছে, বর্তমান সরকার ভোট কারচুপির পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তাই নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানের বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক বৈঠকে সারাহ কুককে এসব কথা বলেছেন দলের নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনের ছয় মাস বাকি থাকলেও ভোট চুরির ষড়যন্ত্র চলছে। তাই নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাদের বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ভোট চুরির পরিকল্পনা নস্যাৎ করার একমাত্র উপায় একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। ‘এই আলোচনা এখন সর্বত্র চলছে এবং এটি আজ (বৃহস্পতিবার) আমাদের আলোচনায় এসেছে।’
গত সপ্তাহের রাজনৈতিক অগ্রগতি ও প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে বিএনপি নেতা বলেন, তাদের দলের একজন নেতা নিহত হয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ডিসি, ইউএনও ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি ও নতুন পদায়ন করা হয়েছে। ‘এগুলো সবই নির্বাচনে ভোট চুরির পরিকল্পনার অংশ।’
আরও পড়ুন:আর নিপীড়ন সহ্য নয়, উপযুক্ত জবাব দিন: মির্জা আব্বাস
তিনি বলেন, বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক দেশ ও সংস্থার উদ্বেগ রয়েছে যে একটি 'অনির্বাচিত' সরকার ক্ষমতায় থাকায় ব্যাপক দুর্নীতির মধ্যে মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং জনজীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হলো একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশগুলোরও এমনটাই প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না- তা নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ রয়েছে। যার মাধ্যমে জনগণ তাদের সংসদ ও সরকার নির্বাচন করবে। ‘ব্রিটিশ সরকারেরও সবসময় এই উদ্বেগ ছিল কারণ আমরা ওয়েস্টমিনস্টারকে অনুসরণ করি। বৈঠকে সেই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপির দাবিকে যুক্তরাজ্য সমর্থন করে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু গ্রেট ব্রিটেন নয়, আরও অনেক দেশ এতে সমর্থন দিচ্ছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘কেন গণতান্ত্রিক দেশের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছে? তারা কী বার্তা পাঠাচ্ছে? কেন তারা একটি প্রতিনিধিত্বমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছেন? তারা কি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশে যাচ্ছেন?
বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এসব প্রশ্ন উঠত না এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এসব বিষয়ে আলোচনা করতে আসতেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বিএনপির কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
খসরু বলেন, বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, তাদের ভোটাধিকার, আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক রাজনীতি এবং সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা সমান সুযোগ ও জীবনের নিরাপত্তা চায়। ‘এগুলো শুধু বিএনপির দাবি নয়, এদেশের কোটি মানুষের দাবি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিকাল ৩টার দিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে যান। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রায় ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট বৈঠক করেন এই ব্রিটিশ কূটনীতিক।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বিএনপির সঙ্গে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক