সকল চক্রান্ত ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে রাজনৈতিক দল ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘নানা ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।’
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর)রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন কি না, তাতে কিছু যায় আসে না।
তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসব চক্রান্ত মোকাবিলায় আমাদের সজাগ থাকতে হবে এবং সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। আমরা জানি এই সরকার খুব শক্তিশালী নয়, কারণ এটি কোনো দল বা মতের প্রতিনিধিত্ব করে না।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা দখল করেনি, জাতি তাদের ওপর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছে। যেহেতু আমরা সরকারকে এই দায়িত্ব দিয়েছি সেহেতু আমাদের অবশ্যই সহযোগিতা করতে হবে। ‘দেশের বিভিন্ন খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। সাম্প্রতিক দুর্গাপূজার সময় শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সেই প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছি।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনরুত্থানের বিরুদ্ধে ঐক্যের ডাক বিএনপির
শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, তৈরি পোশাক কারখানায় নারী ও পুরুষ শ্রমিকের সমতা নিশ্চিত করার দাবির কথা তিনি কখনো শোনেননি। ‘তবে, এ নিয়ে আন্দোলন শুরু হলে কারখানায় হামলা, ভাঙচুর, বন্ধ হয়ে যায়। যারা এই আন্দোলন করেছে তারা কি আসলেই শ্রমিক?’
দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, শুধু ক্ষমতায় নেই এবং দলের শীর্ষ নেতারা পালিয়ে গেছেন বলেই আওয়ামী লীগের দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সামর্থ্য নেই, এমনটা ভাবা ভুল।
তিনি বলেন, ‘তাদের সেই সক্ষমতা আছে এবং তারা বিভিন্নভাবে সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। অথচ অন্যায় দমনের দায়িত্ব সরকারের। আমরা তাদের সহায়তা করতে পারি, কিন্তু সরকারের পক্ষে তা করতে পারি না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রেখে জনগণকে স্বস্তি দিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি হঠাৎ কেন সামনে এল তা নিয়ে উদ্বেগ ও সংশয় প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। ‘বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।’
৫ আগস্ট কারাগারে থাকা নজরুল বলেন, 'কারাগার থেকে আমরা টেলিভিশনে দেখেছি, রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতির ঘোষণার পর এ নিয়ে কোনো বিতর্ক হওয়া উচিত নয়।’
এরপর তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেছেন, তিনি পদত্যাগ করেননি। পরে আমরা একটি টেলিফোন আলাপ শুনেছি যেখানে শেখ হাসিনা বলেছেন যেভাবে পদত্যাগ করা উচিত ছিল সেভাবে তিনি পদত্যাগ করেননি। এর অর্থ তিনি পদত্যাগ করেছেন... তাই তার পদত্যাগ নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকার কথা নয়। তিনি পদত্যাগ করেছেন কিনা, যেহেতু তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, সেহেতু তা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার দ্রুত পলায়নই তার পদত্যাগের প্রমাণ: বিএনপি
বিএনপির এই নেতা বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল হঠাৎ করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে ওকালতি করছে। ‘তারা এর আগে কখনো এটি নিয়ে আলোচনা করেনি এবং এমনকি কয়েকটি বড় দলও এখন এটি সমর্থন করছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যা আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত।’
তিনি বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত তাদের নিম্নকক্ষ বা লোকসভা নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি ব্যবহার করে না, বিধানসভাতেও করে না। ‘পিআর সিস্টেমটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা ফ্রান্সেও প্রয়োগ করা হয় না। এমনকি ইংল্যান্ডে, যেখানে গণতন্ত্রের উৎপত্তি, সেখানেও পিআর সিস্টেম ব্যবহার করা হয় না।’
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় পিআর সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ‘আমরা এটাও দেখেছি যে নেপালে গত ৫-৭ বছরে কতবার সরকার বদল হয়েছে।’
তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ থাকা উচিত নয়। ‘জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিছু চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়, বরং সবার জন্য যেটা কল্যাণকর সেটাই আমাদের গ্রহণ করা উচিত।’
একই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের দোসররা এখনও দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। ‘এই সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। তবে তাদের রাজনীতিতে ফেরা এত সহজ হবে না।’