রবিবারের নির্বাচনে কৃত্রিম ভোটার উপস্থিতি দেখানোর জন্য সরকার ভোটারদের ভয় দেখানোসহ বিভিন্ন অসাংবিধানিক, অনৈতিক ও প্রতারণামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ড. আবদুল মঈন খান।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা সরকারের সব ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে 'প্রহসনের' নির্বাচনে বর্জন করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: বিএনপি রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে: মঈন খান
ভোটের মাত্র দুই দিন আগে মঈন খানের গুলশানের বাসভবন প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ বানচালের পর এটাই ছিল বিএনপির প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন।
তিনি বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় আসন ভাগাভাগি ও বণ্টনের একতরফা নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনা চলছে। সরকার ডামি প্রার্থী ও ডামি দল তৈরি করে থেমে নেই, কারণ তারা এখন জোর করে ডামি ভোটার তৈরির দিকে মনোনিবেশ করেছে।’
আরও পড়ুন: বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করাই একমাত্র লক্ষ্য: মঈন খান
তিনি বলেন, বিএনপিসহ ৬২টি গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি দেশের সব শ্রেণি-পেশার ভোটার এবং দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিক ইতোমধ্যে তথাকথিত নির্বাচন বর্জন ও প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, 'ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে অবৈধ সরকার আসন বণ্টন ব্যবস্থাকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। তাই আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের চিহ্নিত মহল ষড়যন্ত্রের নীলনকশা প্রণয়ন করেছে।’
জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত 'অর্থহীন' নির্বাচনে কৃত্রিম ভোটারদের উপস্থিতি দেখানোর জন্য সরকার যেভাবে সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে, তা নৈতিকভাবে গণবিরোধী ও রাজনৈতিকভাবে শিশুসুলভ।
আরও পড়ুন: সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত জনগণ রাজপথ ছাড়বে না: মঈন খান
তিনি বলেন, 'ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য তাদের সব কৌশলের তালিকা এখন আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারদের কাছে স্পষ্ট।’
ড. মঈন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্র মিথ্যা ও জাল ভোটার উপস্থিতি দেখানোর জন্য অসংখ্য অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
ভোটারদের ভয় দেখানোর অংশ হিসেবে তিনি বলেন, সরকারের এমপিরা হুমকি দিচ্ছেন যে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির লাখ লাখ সুবিধাভোগী ভোটকেন্দ্রে না গেলে তারা তাদের আর্থিক সুবিধা হারাবেন।
আরও পড়ুন: ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করছে সরকার: ড. মঈন খান
মঈন বলেন, বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ মানুষ বিভিন্ন সামাজিক সুবিধা পাচ্ছেন, যা সব সরকারের অধীনে একটি চলমান প্রক্রিয়া। এসব সুবিধাভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বলা হচ্ছে, ৭ জানুয়ারি ভোট না দিলে তাদের ভাতা বাতিল করা হবে।
বিএনপির এই নেতা আরও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা জোরপূর্বক কৌশল অবলম্বন করে অনেক জায়গায় সরকারি সুবিধাভোগীদের কার্ড জব্দ করতে শুরু করেছেন। সুবিধাভোগীদের ঘরে ঘরে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে তারা যদি ভোটকেন্দ্রে না যায় এবং জনসমক্ষে ভোট না দেয় তবে তারা তাদের কার্ড ফেরত পাবে না। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের ভোট দিতে বাধ্য করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: আ. লীগ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে থাকবে: ড. মঈন খান
এছাড়া সারাদেশে প্রায় ২০ লাখ সরকারি কর্মচারীকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে সরকার বেআইনিভাবে নজিরবিহীন উদ্যোগ নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রশাসনের একটি বড় অংশের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে। এটি সরকারি কর্মকর্তাদের ভোটাধিকার নিয়ন্ত্রণের একটি প্রচেষ্টা।’
ড. মঈন বলেন, অবৈধ সরকার ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্র নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোস্টাল ভোট গ্রহণের দিকে মনোনিবেশ করেছে। ‘একই সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ বিভিন্ন নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের এক লাখের বেশি কর্মকর্তাকে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে বলা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় না সরকার: মঈন খান
তিনি বলেন, তথাকথিত নির্বাচনের দিন আনসার ও ভিডিপির ৬১ লাখ সদস্যের একটি বড় অংশ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য ডাকযোগে ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং প্রতিটি পরিবারের কমপক্ষে পাঁচজন সদস্যকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সদর দপ্তর থেকে প্রতিটি ইউনিট ও ব্যাটালিয়নকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, সারাদেশে পুলিশ সদস্যরা ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর মিশনে নেমেছে।
তিনি বলেন, 'ঢাকার পুলিশ কমিশনার নিজে দুই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের ডেকে ভোটকেন্দ্রে যতটা সম্ভব ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের এসপি ও ওসিরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রচারে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং জনগণকে ভোট দিতে বলছেন। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর রাজনৈতিক দায়িত্ব পুলিশকে কে দিয়েছে? এই পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের সাংবিধানিক ও আইনগত ভিত্তি কী?’
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতারা ভোটকেন্দ্রে না গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল ও বিভিন্ন ইউটিলিটি সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
ড. মঈন বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা নানা কৌশল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জাল ভোট দিয়ে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ‘প্রহসনের’ নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না: মঈন খান
তিনি জনগণকে সাহসের সঙ্গে অবৈধ সরকারের হুমকি মোকাবিলা এবং যারা তাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধ্য করছে তাদের নাম রেকর্ড রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, 'আমরা বলতে চাই, এই একদলীয় সরকারের সময় শেষ। সুতরাং তাদের অন্যায্য ও অবৈধ হুমকিনিয়ে চিন্তা করার আর কোনো কারণ নেই। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের জনগণ শিগগিরই একদলীয় শাসনের কবল থেকে মুক্ত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার বিএনপির ওপর দোষ চাপানো এবং তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার জন্য যানবাহন ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগের মতো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দল একতরফা নির্বাচন করে জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলছে, দেশ ও এর সব অর্জনকে ধ্বংস করছে।
আরও পড়ুন: আগামী ৭ জানুয়ারি চরম পরাজয়ের মুখে পড়বে সরকার: মঈন খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান নির্বাচন বয়কটের অংশ হিসেবে শনিবার সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা জনগণকে ধর্মঘট পালন ও নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়েছি। সেজন্য আমাদের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবেন।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ আজকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে ভয় পায়: মঈন খান