শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীর বাড়ি ভাঙ্গার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে এ যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংসদের হাতে কাচের বাক্সে মোড়ানো দুই ভরি ওজনের একটি সোনার নৌকা তুলে দিয়ে নিক্সনের সাথে যোগ দেন মো. কাউসার।
ওই অনুষ্ঠানেই ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে সাংসদ নিক্সনের সাথে যোগ দেন চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের সভাপতি মো. রুবেল মোল্লা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল মোল্লা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মৃধা।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৩ অক্টোবর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মুসার মৃত্যুর কারণে উপজেলার চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয়ে যায়। এবছরের ২৯ মার্চ এ উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। মহামারি করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ ওই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ১৩ সেপ্টেম্বর এ নির্বাচনের ভোট আগামী ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচনের আগে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাউসুর হোসেনের নাম ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ।
এ নির্বাচনকে ঘিরে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই নাটকীয় সব ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। স্বতন্ত্র সাংসদ সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ার আলী মোল্লা আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাউসারের পক্ষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
স্বতন্ত্র সাংসদের সাথে যোগ দিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাউসার শুক্রবার দুপুরে সাংসদের ব্রাহ্মণপাড়ার বাসভবনে আসেন। তার সমর্থকদের নিয়ে সেখানে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করেন তিনি। পরে বিকালে এ যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন।
নিজের অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. কাউসার হোসেন বলেন, আমি ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর বিশ্বস্ত হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু তিনি (কাজী জাফরউল্লাহ) মানুষের প্রতি সম্মান দেখাতে পারেন না। আমি ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে এ উপজেলার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছি। কিন্তু নির্বাচনে জিততে পারিনি। এ নির্বাচনের আগে আমার উপলব্ধি হয়েছে স্বতন্ত্র সাংসদের সমর্থন ছাড়া এ নির্বাচনে জেতা সম্ভব নয়। তাই অনেক ভেবে-চিন্তে ও পরামর্শ করে আমি সাংসদের সাথে দেখা করেছি ও যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘নৌকা হারলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ কালো হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর মুখে হাসি ফোটাতে আমি স্বতন্ত্র সাংসদের সাথে যোগ দিয়েছি।’
যোগদান অনুষ্ঠান চরভদ্রাসনে করার ইচ্ছে ছিল। সেখানে করা হলে তা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন হতো। এ কারণে সাংসদের বাড়িতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, বলেন তিনি।
‘যদি থাকে নসিবে আপনা আপনি আসিবে’ এ গানের কলি গেয়ে কাউসারকে স্বাগত জানান স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবর রহমান নিক্সন।
তিনি বলেন, ‘আমার ডান পাশে দেখেন, বাম পাশে দেখেন সবাই এখন আমার লোক। আমি দুইবার এ এলাকার সাংসদ হয়েছি, এলাকার উন্নয়নে যে পরিমান কাজ করেছি তা অতীতে হয়নি। তাই আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যোগ দিচ্ছেন।’
মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেন, ‘আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আওয়ামী লীগের রক্ত। আজকে অনেক বিএনপি নেতাও আমার সাথে জয়বাংলা স্লোগান দেয়। এটাই আমার প্রাপ্তি বলে মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘কাজী জাফরুল্লাহ গত ৬ মাসেও এলাকায় আসেননি। আমি কাজী জাফরুল্লাহর মতো নৌকা বাই না। আমি বঙ্গবন্ধুর নৌকা বাই। বিভিন্ন প্রতিকূলতা অতিক্রম করেই আমি এলাকাবাসীর জন্য কাজ করছি।’
কাউসারকে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তার সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ার আলী মোল্লার প্রতি সহমর্মিতা জানান তিনি।
নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘আমি নৌকার বিপক্ষে রাজনীতি করি না। আমি তিন থানার জনগণকে মুক্ত করার জন্য একজনের বিপক্ষে রাজনীতি করি। বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকদের বলে দিচ্ছে, এবার আমি নিক্সন চৌধুরী নৌকার প্রার্থীকে নিয়ে নামছি। নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনাকে উপহার দিবো ইনশাআল্লাহ।’
এ সভায় ভাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও আনোয়ার মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।